বীরভূমের শান্তিনিকেতনে কোপাই নদী থেকে বেআইনিভাবে মাটি কাটার অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালাল পুলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতা : বীরভূমের শান্তিনিকেতনে কোপাই নদী থেকে বেআইনিভাবে মাটি কাটার অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালাল পুলিশ। আটক করা হল বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর। ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন আশ্রমিকরা। এ নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের চাপানউতোরও শুরু হয়েছে।’আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে…’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য শান্তিনিকেতনের সেই কোপাই নদীতে আজ মাটি মাফিয়ার দাপট। কোপাইয়ের পাড় থেকে বেআইনিভাবে মাটি কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে ট্রাক্টরের পর ট্রাক্টর।

     

    স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি মাফিয়ার এই দৌরাত্ম্য চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক সুবোধ মিত্রের কথায়, ‘আগে যে কোপাই ছিল, আর এখনকার কোপাই দেখলে চোখে জল আসে। মাটি মাফিয়ার দৌরাত্ম্যে আজ কোপাই শেষের পথে।’

     

    রবিবার কোপাইয়ের পাড়ে হাজির ছিলেন বোলপুর পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ও ইটভাটার মালিক ধর্মেন্দ্র সিং। কাউন্সিলরের ইটভাটাতেও মাটি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখেই অবশ্য তৃণমূল কাউন্সিলর ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাটি কাটায় নিযুক্ত কর্মীদের ধমকাতে।

     

    পরে তাঁর গলায় আজব সুর। বোলপুর পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ধর্মেন্দ্র সিংহের কথায়, ‘ আমার একটা গাড়ি ভুল করে এখানে নেমে গেছে। আমি প্রতিবাদ করি, যেন এখন থেকে মাটি কাটা না হয়। দেখলেন তো, আপনার সামনেই গাড়িটা চলে গেল। এখানে অন্য লোকরা গাড়ি নিয়ে মাটি তুলছে।’বিজেপির অভিযোগ, বেআইনি কারবারের পিছনে তৃণমূলের মদত রয়েছে। বোলপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সম্পাদক সৌমি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘দিনে দুপুরে অবৈধ ভাবে মাটি তোলা হচ্ছে। এর পিছনে তৃণমূল রয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদের আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে।’

     

    বোলপুরের বিধায়ক এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিন্হা বলছেন, ‘কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি তো অন্য কথা বলছেন। যা হচ্ছে তা বেআইনি। আইনগত ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’

     

    স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে অভিযোগ পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থলে যান বোলপুরের BLRO ও শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর আটক করা হয়। বোলপুর বিএলআরও সঞ্জয় রায় বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছি। কয়েকটি ট্রাক্টর আটক করেছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শেষ অবধি কোপাই কবে মাটি মাফিয়ার দখলমুক্ত হয়, সেটাই দেখার।