|
---|
শরীফুল ইসলাম, নতুন গতি :
কলকাতা হাইকোর্ট থেকে রাজ্য সরকার , রাজ্য সরকার থেকে ধাক্কা খেয়ে ফের হাইকোর্ট এবং এখান থেকেই রায় পক্ষে এলেও এক ইঞ্চিও গড়াল না বঙ্গ বিজেপির রথের চাকা।
সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ স্লোগান কে সামনে রেখে বিজেপির রথ যাত্রা’র কর্মসূচি গৃহীত হয়।
রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের অনুমান, আসলে গণতন্ত্র বাঁচাও কর্মসূচির আড়ালে বিজেপির পাখির চোখ ২০১৯ – এর লোকসভা নির্বাচন।তাই, আদবানিজির স্টাইলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ রাজ্যে দিলীপ ঘোষদের দিয়ে জেলাওয়ারী সংগঠনের হাল হকিকত জানতে উদ্যোগী হয় ।
সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে এতদিনে রথের চাকা পশ্চিমবঙ্গের লোকসভার ৪২ টি আসন ছুঁয়ে ফেলার কথা ছিল।
সূত্র, রাজ্য প্রশাসনের রিপোর্টে ছিল ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ কে সামনে রেখে আসলে রথ চলা শুরু হলে যাত্রা পথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে এই সম্ভাবনার বিষয় টি প্রশাসনের তরফে ছিল ।
বহু আলাপ আলোচনা , এবং চাপ পাল্টাচাপ সব শেষে বৃহস্পতিবার কোর্টের নির্দেশ, শর্তসাপেক্ষে আপাতত শুরু করতে পারে বিজেপি রাজ্যে তাঁদের রথযাত্রা।
এমনিতেই নিকট সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে ভোটের ফলাফল বিরুদ্ধে যাওয়ায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বেশ বিপাকে। সেই প্রভাব পড়ছে রাজ্যেও। গোদের উপর বিষফোরা হয়ে দাঁড়িয়েছিল রথের রশি আদৌ রাজ্য বিজেপির হাতে আসবে কিনা সেই প্রশ্ন ঘিরে।
রাজ্যে শান্তিশৃখলা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে গত শনিবার রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোর্টের নির্দেশে বিজেপির রাজ্য কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় , রথ যাত্রার সরকারী অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।
এর পরেই রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলনের পথে হাঁটেন । পাশাপাশি চলে আইনি লড়াই।এবং শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও শুরু করে দেন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় হুমকি ।
রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে প্রস্তাবিত রথ যাত্রার অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে আরামবাগে এক আইনঅমান্য কর্মসূচী তে অংশগ্রহণ করে দিলীপ বাবু তাঁর দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ঝাড়ের বাঁশ হাতে রাখুন।”
ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বিজেপির রাজ্য দফতরে মিটিং করে গিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজ্য প্রশাসনের রথ যাত্রার বিষয়ে এই ‘ না’ কে হাতিয়ার করে কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় আইন অমান্য কর্মসূচি শুরু করে দেয়।
বুধবার দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে হাওড়ায় আইন অমান্য কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশ ও বিজেপির কর্মীদের মধ্যে খণ্ড যুদ্ধু বেঁধে যায়।
এদিকে , বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বিজেপির প্রস্তাবিত রথ যাত্রার অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টিকে ঘিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে সার্বিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুললে পাল্টা জবাবে তৃণমূলের সংসদীয় দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে রাজ্য প্রশাসন রথ যাত্রার অনুমতি দেয় নি। এর পিছনে রাজনীতি খোঁজা অর্থহীন।”
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আসন্ন লোকসভায় ৪২ টির মধ্যে একটি আসনও সুনিশ্চিত না থাকলেও বর্তমান কেন্দ্র বিরোধী শক্তি কে সংহত করতে মমতা বন্দোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় বিজেপি শিবিরের একটি বিরাট রিস্ক ফ্যাক্টর । তাই মমতাকে কে বিব্রত করতে প্রস্তাবিত রথ যাত্রার অনুমতি কোর্ট দিক বা না দিক আগামী লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে কে ব্যস্ত রাখার কৌশল বিজেপি নেবেই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত । তাই অনুমতি দিলেও ভালো না দিলে আরো ভালো এমন একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল রাজ্য বিজেপির অন্দরে।
বৃহস্পতিবার , সব কিছু খতিয়ে দেখে হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে বিজেপির প্রস্তাবিত রথযাত্রায় রায়ে সায় দেয়।
পক্ষে রায় হাতে এলেও রথ যাত্রার সময় সুচী ও স্থান নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চলছে দড়ি টানা টানি।
রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রথ যাত্রার একটি খসড়া তৈরি করে বলেন, চলতি মাসের ২২, ২৪, ২৬-এ গণতন্ত্র বাঁচাও বা রথ যাত্রার সূচনা হবে যথাক্রমে বীরভূম, গঙ্গা সাগর, কোচবিহার থেকে। এদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা জানান , কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদন সাপেক্ষে রথ যাত্রার চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হবে।
এরপর রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়’ মত দেন , রথ যাত্রার প্রস্তাবিত তারিখ হতে পারে ২৮, ২৯, এবং ৩১ শে ডিসেম্বর।
সব মিলিয়ে সাংগঠনিক শক্তি ততটা মজবুত এখনো পর্যন্ত রাজ্যে তৈরি না হওয়ায় এবং কোর্টের কয়েকটি শর্ত যাত্রা পথে লংঘিত হবার সম্ভাবনার কথা আশঙ্কা করে ‘রায়’ পেয়েও তাই রথের চাকা রাজ্যের পথে চালিয়ে যেতে বেজায় চিন্তায় বিজেপির রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ।