সোনালি গুহর চিঠি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, চাইলেন ক্ষমা

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: ‘ভুল’ ভাঙল সোনালি গুহর৷ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্দেশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলা চিঠি দিলেন তিনি৷ সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক স্বীকার করেছেন, ‘মাছ যেমন জল ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমনই আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না৷’

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গী এবং সাতগাছিয়ার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক সোনালিকে এবার বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট দেয়নি তৃণমূল৷ এর পরই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন তিনি৷ যদিও বিজেপি-ও তাঁকে প্রার্থী করেনি৷ সোনালি অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, তাঁকে জোড়াসাঁকো থেকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি রাজি হননি৷ তিনি চেয়েছিলেন দলের হয়ে প্রচার করতে৷

    এ দিন ট্যুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে সোনালি লিখেছেন, ‘অত্যন্ত ভগ্ন হৃদয়ে বলছি যে. আমি আবেগপূর্ণ হয়ে চরম অভিমানে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য দলে গিয়েছিলাম৷ যেটা ছিল আমার চরম ভুল সিদ্ধান্ত৷ কিন্তু সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি৷ মাছ যেমন দল ছাড়া বাঁচতে পারে না, তেমনই আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না৷’তৃণমূলনেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে সোনালির কাতর আর্জি, ‘দিদি আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী৷ দয়া করে আমারে ক্ষমা করে দিন৷ আপনি ক্ষমা না করলে আমি বাঁচব না৷ আপনার আঁচলের তলায় আমাকে টেনে নিয়ে, বাকি জীবনটা আপনার স্নেহতলে থাকার সুযোগ করে দিন৷’

    কিন্তু কেন বিজেপি ছাড়ছেন? সোনালির দাবি, বিজেপি তাঁকে কাজেই লাগায়নি৷ প্রার্থী হতে নয়, সামাজিক সুরক্ষার জন্যই বিজেপি-তে গিয়েছিলেন তিনি৷ সোনালির দাবি, তিনি প্রচার করতে চাইলেও দল তাঁকে ডাকেনি৷ তাই বিজেপি-তে দমবন্ধ হয়ে আসছিল তাঁর৷ তবে সোনালি বার বারই স্বীকার করে নিয়েছেন, বিজেপি-তে যাওয়া জীবনের অন্যতম ভুল সিদ্ধান্ত তাঁর৷ প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, ‘মানুষ মাত্রেই তো ভুল হয়৷ বিজেপি-তে দমবন্ধকর পরিস্থিতি৷ নাথুরাম গডসের জন্মদিন পালন করতে পারব না৷ আমি গান্ধিবাদী মহিলা৷ ‘

    সোনালি গুহর কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি আমার বাড়ি৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে আমার প্রতিটা নিঃশ্বাসে জড়িয়ে রয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে জড়িয়ে রয়েছেন৷ আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া বাঁচতে পারব না৷ নিজের দলেই ফিরতে চাই৷ ‘ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘চার জন নেতাকে গ্রেফতার করল৷ বসে থেকে হাত কামড়ালাম৷ নিজাম প্যালেসে গিয়ে দিদির পাশে দাঁড়াতে পারলাম না৷’

    সোনালির দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত নম্বর তাঁর কাছে নেই৷ তাই তিনি ট্যুইটেই ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখেছেন তিনি৷ সোনালির আশা, মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই তাঁর চিঠি দেখবেন৷ তবে ভুল বুঝতে অনেক দিন দেরি হয়ে গেল বলেও আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে৷

    সোনালি গুহ স্বীকার করে নিয়েছেন, বিজেপি-তে গেলেও তাঁর মন তৃণমূলেই পড়েছিল৷ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আগামী সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত মেজ ভাই অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারলৌকিক কাজের দিন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যেতে চান তিনি৷

    যদিও সোনালি গুহর দলত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ দিলীপের হাত থেকেই বিজেপি-র দলীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন সোনালি৷ এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘যেভাবে বিজেপি নেতাদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে, তাতে নিজেকে অসুরক্ষিত মনে করছেন৷ যাঁরা লড়াই করার ক্ষমতা ধরেন না, তাঁরা হয় বসে যাবেন না হলে দল পরিবর্তন করবেন৷ বিজেপি সবাইকে সম্মান দিয়েছে৷ ওনার এতদিন তৃণমূলে দমবন্ধ হয়ে আসছিল, আবার এখন বিজেপি-তে দমবন্ধ লাগছে বলে সেই দলেই ফিরে যেতে চাইছেন৷ তার কারণ কি তিনিই বলতে পারবেন৷’

    যদিও তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘যাঁরা দল ছেড়ে চলে গিয়েছিল তাঁদের ফেরানো হবে কি না, এ বিষয়ে তৃণমূল এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ সোনালি গুহর স্বামী আমাকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলেন৷ কিন্তু দলত্যাগীদের আদৌ ফেরানো হবে কি না, ফেরালেও এক্ষেত্রে দলের নীতি কী হবে তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি৷’