|
---|
শরিফুল ইসলাম, শান্তিপুর :রাষ্ট্রায়ত্ত স্টেট ব্যাংকের অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে টাকা গচ্ছিত রেখে হয়রানি ও প্রতারিত গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রাহকদের ন্যায্য মর্যাদা ও টাকা ফিরতের দাবি নিয়ে বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের ভারতীয় স্টেট ব্যাংক, শান্তিপুর শাখার সামনে শাখা খোলা থাকাকালীন পূর্ব ঘোষিত অনির্দিষ্ট কালের অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচির আজ ছিল প্রথম দিন।
অভিযোগ, বছর তিনেক আগে শান্তিপুর ১নম্বর শান্তিগর কলোনীতে স্টেট ব্যাংকের একটি সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তা এমআইএস ও ফিক্সড ডিপোজিটের মোটা অংকের টাকা সহ ১২৯৪ জন একাউন্ট হোল্ডারের টাকা নিয়ে চম্পট দেন। প্রতারিত গ্রাহকগণ তাঁদের একাউন্ট আপডেট করতে মাদার ব্যাংক হিসাবে স্টেট ব্যাংকের শান্তিপুর শাখায় আসেন। এবং তখনই দেখা যায়, অধিকাংশ গ্রাহকের টাকা ব্যাংকের খাতায় ওঠে নি বা উঠলেও তা আবার তুলে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি শাখা প্রবন্ধকের নজরে এলেও তিনি এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ করেন নি উপরন্তু , সংশ্লিষ্ট বিষয় ভুক্তভোগী গ্রাহক কথা বলতে গিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে হেনস্থা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।
সূত্রের খবর, জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে যাবার সময় এক দিন বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য ব্যাংকের সামনে অস্বাভাবিক জটলা দেখে গাড়ি থামিয়ে গ্রাহক দের সঙ্গে কথা বলে সাধারণ মানুষের প্রতারণা ও হেনস্থার ঘটনার জানতে পারেন।
এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়ে তখনই ব্যাংকের শাখা প্রবন্ধকের সঙ্গে কথা বলেন। কথা বলেন স্টেট ব্যাংকের রিজিওনাল ও জোনাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপে সেই সময় ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের একটি বৃহৎ অংশ টাকা ফেরৎ পান। এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থির হয়, বাকি ক্ষতিগ্রস্তদের একটি নামের তালিকা বিধায়ক অরিন্দম বাবুর উদ্যোগে প্রস্তুত করার।
জানা গেল , দীর্ঘ টাল বাহানার পর প্রস্তুতকৃত তালিকা থেকে টাকা ফেরৎ দেওয়া কথা ছিল এদিন। সেই মতন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়ে শাখা প্রাবন্ধীকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইতিবাচক পদক্ষের ইঙ্গিত না পেয়ে ক্ষুব্ধ বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য নিজের লেটেরহেড -এ অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে আবার সাতদিন সময় দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে।
এতেও কাজ না হলে বিধায়ক অরিন্দম বাবু ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন।
বিক্ষোবস্থলে দেখা গেল, অসংখ্য মানুষ যাঁদের অধিকাংশই মহিলা নয়তো প্রবীণ। এঁদের এজন ষাটোর্ধ নিমাই চন্দ্র বিশ্বাস বললেন, ” প্রধানমন্ত্রী নাকি পনেরো লাখ টাকা দেবে তাই বলে ওরা খাতা খুলে দিলো। আমি নিজেও গতরে খেটে কিছু টাকা রেখে ছিলাম। সেটাও মনে হয় ওরা আর ফিরত দেবে না।”
কল্পনা রায়, সূত্রাগর রায় পাড়া অঞ্চল থেকে এসেছেন। জানালেন, “টাকা চাইতে গেলে ব্যাংক বলে , ঘার ধাক্কা দিয়ে বার করে দেব। আমরা ভয় পাই না। বিধায়ক অরিন্দম আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরাও এর শেষ দেখে ছাড়বো।”
কল্পনা রায় বা নিমাই বাবু এঁদের সঙ্গে মঞ্জু গুপ্ত অথবা অঞ্জলি রায় কিংবা লক্ষী কর্মকার এখানেই শেষ নয় দেখা গেল তালিকাটা অনেক বড়। এবং এক জায়গায় ওঁদের যথেষ্ট মিল খুঁজে পাই—এরা সকলেই অত্যন্ত গরিব, প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ। সরাসরি ব্যাংকে এসে একাউন্ট করার মতন সাহস এঁদের নেই। খুবই অসহায় ।
মঞ্চের সামনেই ছিলেন পুষ্প রানী সরকার। বিধায়ক তাঁকে মাসিমা বলে কাছে ডেকে নিলেন। বিধায়ক ভদ্র মহিলা কে দেখিয়ে এই প্রতিবেদক কে শোনালেন, “স্বামী অসুস্থ।কালনাঘাট নৌকা ডুবির ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জন কারী ছেলের মৃত্যু হয়। সরকারি অনুদানের টাকা স্বামীর একাউন্টে এসেছে। এখনো পায়নি।”
ছেলে চলে গেছে। টাকা টা পুষ্প দেবী হাতে পেলে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা করাবেন। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন সে কথা।
মঞ্চে বসে বিধায়ক ও শুনছিলেন তাঁর কথা।
তরুণ, উদ্যমী প্রত্যয়ী বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের দাঁতে দাঁত চেপে স্বগোক্তি, ” আমার বিধানসভা অঞ্চলের মধ্যে দুর্নীতি হতে দেব না।যতদূর যেতে হয় যাবো, এঁদের টাকা ফিরিয়ে আনবই।”
ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের কে ফোন করলে রিং বেজেই যায়। শেষে , বহরমপুর আঞ্চলিক অফিসে যোগাযোগ করা হলে ওখান থেকে বলা হয়, “জরুরি মিটিং চলছে। পরে যোগাযোগ করুন।”
প্রচন্ড গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। মঞ্চে বসে ফর্সা টুকটুকে চেহারার বিধায়কের কপাল থেকে দর দর করে ঘাম ঝরে পড়ছে। তবু অবিচল মুখের অভিব্যাক্তি বলছে, হ্যাঁ, মানুষের জন্য প্রকৃত ভালোবাসা থাকলে কঠিন কাজও সহজ মনে হয়।