প্রায় ছয় বছর আগে ‘খুন’ হয়েছিলেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মৃত্যুঞ্জয়! সম্প্রতি সেই ঘটনায় সিআইডি দু’জনকে গ্রেফতার করেছে

বালি-রাজনীতি। বোর্ড গঠনে বিদ্রোহ। দীর্ঘ সময় পর খুনের ঘটনায় গ্রেফতারে ‘ক্রোনোলজি’ স্মরণ করিয়ে রাজনীতি দেখছে বিরোধীরা। তবে নিহতের পরিবার দেখছে, ‘ঈশ্বরের হাত’ আর ‘ইনসাফ! অবশেষে গ্রেফতার, স্বস্তি নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারে। গত প্রায় ছয় বছর আগে ‘খুন’ হয়েছিলেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ওরফে ঝাড়েশ্বর সাঁতরা। সম্প্রতি সেই ঘটনায় সিআইডি তৃণমূলের দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।তা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে সিআইডি। তৃণমূল নেতা খুনে তৃণমূল নেতা ফটিকরঞ্জন পাহাড়ি-সহ আরও একজনকে গ্রেফতার করার পর নিহতের পরিবারের লোকজন দোষীদের শাস্তির দাবি তুললেন। তবে তাঁদের বক্তব্য,” ফটিক নাকি অন্য কেউ মেরেছে জানি না। খুনের ঘটনায় কাদের যোগ আছে জানি না। তবে দোষীদের শাস্তি হোক।” মৃত ঝাড়েশ্বর সাঁতরার স্ত্রী রুনা সাঁতরা মঙ্গলবার বলেন, “কেন এতদিন পরে তদন্ত বলতে পারব না। আমাদের তখন লড়াই করার মতো কেউ ছিল না। তাই তদন্তটি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। এখন ঈশ্বর হয়ত চেয়েছেন।”

     

    পরিবারটি জানাচ্ছে, নছিপুর পঞ্চায়েতের ডাডরা গ্রামের বাসিন্দা ঝাড়েশ্বর তৃণমূল নেতা ফটিকরঞ্জন পাহাড়ির সঙ্গে থেকে কাজ করতেন। তখন নছিপুর পঞ্চায়েতটি ফটিকদের দখলে ছিল। ১৯৯৮ সালে কেশিয়াড়িতে জগদীশ দাশের হাত ধরে তৃণমূল শুরুর কয়েকবছর পর থেকেই কেশিয়াড়ির তৃণমূল জগদীশ ও ফটিকে বিভক্ত হয়েছিল। ঝাড়েশ্বর সাঁতরা ছিলেন ফটিক গোষ্ঠীর।পরিবারের বক্তব্য, ফটিকের ‘ডানহাত’ ছিলেন তিনি।২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে ‘খুন’ হন ঝাড়েশ্বর। নছিপুরে অঞ্চলের মিটিং সেরে রাতে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। তবে বাড়ি ফিরতে পারেননি। পরেরদিন ভসরার কাছে নয়ানজুলির পাশ থেকে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। বাম পায়ে বিঁধেছিল তীর। ক্ষতবিক্ষত ছিল দেহ। বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল তৃণমূল। থানা ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ করেছিল তারা। তাতে ফটিকরঞ্জনই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কেশিয়াড়ি বাসস্ট্যান্ডে হয়েছিল স্মরণসভা। ফটিকরাই তাঁর আয়োজন করেছিলেন।

     

    সে সময় তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, প্রথমে দুষ্কৃতীরা তির ছোড়ে। বাম পায়ে তির লেগেছিল ঝাড়েশ্বরের। বাইক থেকে পড়ে গেলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। মাথায়, কপালে, চোখে ক্ষত ছিল। প্রথমে পুলিশ পরে ঘটনার তদন্ত ভার পায় সিআইডি। সেই ঘটনার পর ভসরার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুবর্ণরেখা নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। প্রায় বিস্মৃতিতে চলে গিয়েছিল এই ‘খুন’য়ের ঘটনা। ঝাড়েশ্বরের পরিবারের লোকজনও প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। প্রায় ছয়বছর পর খুনের ঘটনার তদন্ত নতুন করে শুরু হল।কেন তদন্ত? বিরোধীরা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন দিচ্ছেন ‘ক্রনোলজি’। তাদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত সমিতি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করলে ফটিকের এই পরিস্থিতি হত না। গত পঞ্চায়েতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে পদ্ম ফুটেছিল কেশিয়াড়িতে। তাতে নাম জড়িয়েছিল ফটিক ও জগদীশের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এ বারে অবশ্য তৃণমূল সাতাশটি আসনের মধ্যে তেইশটিতে জেতে। তবুও দ্বন্দ্বে পঞ্চায়েত সমিতি গঠন হয়নি। সভাপতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছিলেন ফটিকরঞ্জন ও তাঁর অনুগামীরা। হাই কোর্টেও প্রশাসনের আধিকারিকদের নামে মামলা করেছিলেন। তার পরেই দল তাকে সাসপেন্ড করে। সিআইডিরও তৎপরতা দেখা যায়।

     

    ঝাড়েশ্বরের স্ত্রী রুনা সাঁতরাকে ২০১৮ সালে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে একটি চাকরি দেওয়া হয়েছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন রুনা। তিনি বলেন,” সরকার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তবে ভেবেছিলাম খুনের তদন্ত ধামাচাপা পড়ল। এতদিন পর ফের তদন্ত গতি পাবে জানা ছিল না। ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তারা শাস্তি পাক।” ঝাড়েশ্বরের বড় ছেলে তেইশবছর বয়সী পবিত্র সাঁতরা বলেন,” সিআইডি যাদের ধরেছে বাবার খুনের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চয়ই কিছু সূত্র পেয়েছে। তা নাহলে গ্রেফতার করবে কেন!”