পশ্চিমবঙ্গ কি সেফ ? উত্তর খুঁজছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় | দ্বিতীয় পর্ব

পশ্চিমবঙ্গ কি সেফ ? উত্তর খুঁজছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় | দ্বিতীয় পর্ব

    সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

    গতকালকে একটি লেখা শুরু করেছিলাম যার শিরোনাম ছিল পশ্চিমবঙ্গ কি সেফ?

    মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী নিজেই আজকে জানালেন, না। সেফ নয়।

    কারণ আজ বিবৃতি দিয়েই তিনি বললেন , লাখ লাখ মানুষের জন্য তার ব্যবস্থা নেই। সে ক্ষেত্রে বাড়িতেই রেখে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে সেলফ হোম করেনটাইনে রেখে। Covid আক্রান্ত রোগীকে অবশ্য নিয়ে যাওয়া হবে সরকারি নির্দিষ্ট covid হসপিটালে। কিন্ত বাকি যদি রোজ গাদা গাদা মানুষ আসতেই থাকে, কি করে তাদের রাখবে সরকার?

    সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে হচ্ছে, রাজ্যের সমস্ত স্টেডিয়ামগুলোকে কি করেনটাইন সেন্টার করা যেত না? সমস্যা কি জায়গার অভাব? নাকি আসলে সত্যিই চিকিৎসা কর্মী নেই!আমার মনে হয়,  এটাই আসল ঘটনা।

    মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাই হাত তুলে দিয়েছেন।

    বোঝা গেল, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে , আর একদিকে রাজ্যপালের রাজনীতি আর অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চাপ নিয়ে তিনি বিরক্ত!! যে অতি উৎসাহ নিয়ে কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় তিনি একা বাঘিনীর মতন ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, লাগাতার লকডাউন আর অবাধ্য জনগণের সঙ্গে না পেরে উঠে শেষ পর্যন্ত বুঝে নিয়েছেন এই রাজ্যের কথা না শোনা মানুষগুলোর জন্য আর কিছু করার নেই!!

    ঠিক এমন একটি আশংকাই হচ্ছিল মনের মধ্যে। এমন  মহামারীর মুখে যখন সমস্ত মানুষগুলোর একজোট হয়ে লড়াই করার কথা, অন্য সমস্ত রাজ্যের রাজনীতিকরা  এক হয় করোনা যুদ্ধে শামিল হতে পারে, শাসক-বিরোধী কোন ভেদাভেদ নেই, শুধু পশ্চিমবঙ্গে তখন বিজেপির লাগাতার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা, তার সঙ্গে সিপিএম কংগ্রেস এক হয়ে হারানো জমি ফিরে পাওয়ার জন্যে ,—

    করোনায় মৃতের আসল তথ্য বের করবার দাবিতে। অন্যদিকে রাজ্য সরকার  যাই বলুক, ভুল তার নিজেরই। কি দরকার ছিল সাংবাদিক সম্মেলনে  মৃতের সংখ্যা ৭ বলার দুই ঘন্টা পর মুখ্য সচিবকে দিয়ে  ফের মৃতের সংখ্যা ৩ করার। তিনটে বেড়ে গেলেও তো এতো সমস্যা তাঁকে পোহাতে হতো না।

    কিন্তু অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট …..!!

    বিশ্বখ্যাত দের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি করে বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে অডিট করে মৃতের সংখ্যা লিখতে গিয়ে শুধুই জল ঘোলা করা হলো।সেই মর্বিডিটিস প্রশ্নে,মানে করোনা ছাড়াও অন্য রোগে মৃত্যু হলো কিনা সেটা দেখবে এক্সপার্ট কমিটি হলেও, এদিকে বিতর্ক চলতেই থাকে …

    করোনা হিসেবে চিহ্নিত না হলেও করোনা নিয়েই তো মরেছে!

    এদিকে এই বিতর্কের আড়ালে যে কলকাতা হাওড়া শহরের  বস্তিতে বস্তিতে ছড়িয়ে যাচ্ছে করোনা, তার প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। মহারাষ্ট্রের ধারাভিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দেখেও করোনা ছড়ানো বন্ধ করতে কোন বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হলো না। শুধু বিশেষজ্ঞ কমিটির বিজ্ঞাপন দেখিয়ে তো আর করোনা থামে না। তাই শেষ পর্যন্ত রাস্তায় নামতে হলো মুখ্যমন্ত্রীকে।

    কেন ? কোথায় তার প্রশাসন? কোথায় তার দল?তার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কেন নেই পাড়ায় পাড়ায় বাড়িতে বাড়িতে তাদের কাউন্সিলররা? সকলেই আছেন পাড়ায় পাড়ায়। হয়তো কিছু কাজে আছেন কোন বিশেষ দায়িত্বে বা স্থানীয় জনসেবায়।

    কিন্তু করো না সংক্রমণ ঠেকাতে গন সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করতে যে বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেই কর্মসূচি পালন করতে না পারলে ছড়াতে থাকবে সংক্রমণ। তখন তো এটাই মনে হবে মানুষের হলে করণীয় কি?

    এই জন্যই প্রশাসন ও দলীয় কর্মীর সবাইকে নিয়ে প্রতিটি মহল্লায় তল্লাশি চালিয়ে জ্বর জারিতে আক্রান্ত দের

    স্বাস্থ্যকর্মীর হাতে তুলে দেওয়া উচিত। প্রাথমিক পরীক্ষার পর আক্রান্তদেরকে নিয়ে চলে আসা উচিত সরকারি করেনটাইন কেন্দ্রে।এই কাজে  জন স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে একমাত্র পুরসভা এবং পঞ্চায়েত। এটাই করা দরকার অবিলম্বে। এটা হচ্ছে না বলেই সমস্যাটা বাড়ছে।

    তথ্যসূত্র বার্তা সাম্প্রতিক