|
---|
মহঃ রিপন, বীরভূম
এই ফিল্মে সারাগড়ীর বিখ্যাত যুদ্ধ দেখানো হয়েছে। এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে মাত্র 21 জন শিখ সেনা 10,000 পাঠান সেনার মোকাবিলা করেছিলেন।
যুদ্ধে কারা নেতৃত্ব দেয় ,কত জন মারা যান।কতজন জীবিত বা মৃতের হিসেব করা আমার কাজ নয়।নেট ঘাটলে পাবেন।আমার লক্ষ্য পারসেপশন বিচার করা।জালিয়াওয়ালা বাগে জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে গুলি চালায় ব্রিটিশ ফৌজ।যাঁরা গুলি চালায় তাঁরা ছিলেন গোর্খা।পেটের দায়ের চাকরিজীবি।বিনয় বাদল দীনেশদের ঘায়েল করতে রাইটার্সের কিংবদন্তি সম অলিন্দ যুদ্ধে গোর্খা ফৌজের ডাক পরেছিল।আমাদের বাঘাযতীন, চিতপ্রিয়, মনোরঞ্জনদের বিখ্যাত বুড়িবালামের যুদ্ধে টেগার্টের নেতৃত্বে যে বিশাল বাহিনী হাজির হয় তাতে বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা ছিল।মাস্টারদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জালালাবাদের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষ নেয় বহু বাঙালি আধিকারিক।সেনা, জওয়ানরাও ছিল বাঙালি।ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধে শহীদদের আমরা মনে রেখেছি।ব্রিটিশদের হয়ে চাকরি করা চাকুরেদের নয়।কারণ তাতে ‘নেশন’নেই।দুই মহাযুদ্ধের বিভিন্ন রণাঙ্গনে ভারতীয় যোদ্ধারা লড়েছিল বীরত্বের সঙ্গে।আমরা তাঁদের মনে রাখিনা।কারণ আমাদের আজকের ভারতবর্ষের প্রচলিত ‘নেশনের’ ধারণার সঙ্গে তা সামঞ্জস্য পূর্ন নয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল শ্যাম মানেক শর ভূমিকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।কিন্তু ক জন জানেন এই মানেক শ নেতাজির আইএনএর বিরুদ্ধে বার্মা ক্যাম্পেনে ব্রিটিশদের পক্ষ নেন।এটাই ইতিহাস।খান সেনার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া মানেক’শ কে আমরা মনে রেখেছি।নেতাজির আজাদী সৈনিকদের বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়া মানেকশ কে নয়।আমরা প্রেম কুমার সাহেগল, গুরবক্স সিং ঢিলোঁ, শাহনওয়াজ খান কে মনে রেখেছি।
আফগানিস্তানের বিদ্রোহী জনগোষ্ঠী আফ্রিদি, আচাকজাই রা লড়াই করছিল নিজেদের স্বাধীনতার জন্য।তাঁদের সমাজে নারী স্বাধীনতা,নাগরিক স্বাধিকার নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, কিন্তু ঔপনিবেশিক শক্তির হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া পেশাদার ভারতীয় সৈনিকদের মুখে ধর্মীয় উষ্কানীমূলক সংলাপ বসানো মানে ভারতীয় নেশনকে অস্বীকার করা।আজ বিনয় বাদল দীনেশদের বিরুদ্ধে লড়াই করা কোনও গোর্খা ফৌজির জীবনি ,ইতিহাস সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টি কোন থেকে ব্যবহার করলে আমরা মেনে নেব?পূর্ব পাকিস্তানে সাহসিকতার সঙ্গে লড়তে যাওয়া কোনও পাক রেঞ্জার্সের জীবনীতে মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকা খাটো করলে নিশ্চুপ থাকব?জালিয়াওয়ালা বাগের খুনিদের,ভগৎ সিংহদের,উধম সিংহদের ফাঁসিতে ঝোলানোর পশ্চাতে জড়িত ভারতীয়দের গ্লোরিফাই করে হলিউডে ফিল্ম তৈরি হলে নিশ্চুপ থাকবো?
আসল ঘটনাটি ছিল 12 ই সেপ্টেম্বর 1897 সাল, আরকজই সম্প্রদায়ের 8000-10,000 পাঠান সতন্ত্রতা সেনানী ইংরেজদের অধীনস্থ সারাগড়ীতে হামলা করেন। সেইস্থানে পূর্ব থেকেই 36 B শিখ ব্যাটেলিয়নের 21 জন শিখ সেনা উপস্থিত ছিলেন। তারা শীঘ্রই পাশ্ববর্তী কেল্লা লাঁকহার্টে ‘কর্ণেল হাঁটন’কে এই হামলার সংবাদ প্রেরণ করেন।
কর্নেল হাঁটন ইংরেজদের বাহিনী পৌঁছানো পর্যন্ত যেকোনো প্রকারে সতন্ত্রতা সেনানীদের আটকে রাখার নির্দেশ দেন। অপরদিকে পাঠান সতন্ত্রতা সেনানীরা শিখদের বলেন, ‘আপনারা হিন্দুস্তানী, আপনারা আমাদের ভাই, আপনাদের সঙ্গে আমাদের কোনোও শত্রুতা নেই, আমাদের শত্রুতা ইংরেজদের সঙ্গে, আপনারা ভারতীয় হওয়ার সুবাদে আমাদের সহযোগিতা করুন।’ কিন্তু শিখ বাহিনী পাঠান সতন্ত্রতা সেনানীদের কথা শুনতে রাজি হননি, তারা পাল্টা গুলি চালিয়ে দেন। ফলে পাঠান সতন্ত্রতা সেনানীরা কেল্লার দিকে এগোতে থাকেন। কেল্লা পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে 200 পাঠান সতন্ত্রতা সেনানী শহীদ হয়ে যান।
অবশেষে পাঠানরা কেল্লার দেওয়াল ভেঙ্গে ফেলেন এবং হত্যা করে দেন। পরের দিন ইংরেজদের বিশাল সেনাবাহিনী এসে পৌঁছায়। ইংরেজ বাহিনী বনাম পাঠান সতন্ত্রতা সেনানীদের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়, যাতে আরোও 600 জন পাঠান সতন্ত্রতা সেনানী শহীদ হয়ে যান, এবং ইংরেজ বাহিনী কেল্লা পুনরায় দখল করতে সক্ষম হয়।
কিন্তু সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো যখন ইতিহাসকে সাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য আমাদের দেশের প্রাণ বিসর্জনকারীদের আজ বাহাদুর হিসেবে প্রদর্শন করা হচ্ছে আর ইংরেজদের বিরুদ্ধে, দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণের বলিদান দিয়েছিলেন তাদের তুচ্ছ করে দেখানো হচ্ছে।
সেই সময় আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, যখন ‘সানি দেওল’ ইনাদের প্রতীক ছিলেন, পাকিস্তানের আড়ালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মনোভাব সৃষ্টি করা হচ্ছিল। কিন্তু সৃষ্টি কর্তার লাঠিতে কোনোও আওয়াজ হয় না, সেই সময় কালের রাষ্ট্রবাদী হিরো আজ আডবাণীর মতো কোন কোনে পড়ে আছেন।
এখন ইনাদের হিরো ‘অক্ষয় কুমার’। ইনার বেশীরভাগ সিনেমাই এই ধরনের, যদিও ইনি বেশীরভাগ সিনেমায় নিজে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমার মনে হয় বলিউড জগত চালাতে মুসলিমদের বিশাল ভূমিকা আছে। যদি তারা এমন ফিল্মের বয়কট করেন তবে এদের কতো আওকাত আছে তার পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাবে।
শেষে বলি, ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে যুদ্ধকারী শিখরা দেশভক্ত, আর দেশকে স্বাধীন করানোর জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী পাঠানরা হলেন হামলাকারী!! যে সমাজ এইসব কথা জেনেও সিনেমা হিট করাচ্ছে তাদের কাছ থেকে আর কি আশা করবো!