|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : শিক্ষক জাতির মেরুদণ্ড। সততা আদর্শ শিক্ষকতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা বাংলা ও বাঙালির জন্য লজ্জার, ক্ষোভের ও দুঃখের যে স্বাধীন ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার এমন এক ব্যক্তির জন্মদিন উপলক্ষ্যে শিক্ষক দিবস পালন করতে বাঙালিকে বাধ্য করে, যে এক বাঙালি গবেষকের থিসিস থেকে টোকার দায়ে দোষী। এই অপরাধকে শিক্ষাজগতে প্লেজিয়ারিজম বলা হয়, সহজ কথায় অন্যের বৌদ্ধিক উৎপাদন চুরি।
যে ‘Indian Philosophy’ গ্রন্থের জন্য সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ বিখ্যাত, সেখানে বিশ্লেষণের সবচেয়ে ক্ষুরধার অংশগুলো হুবহু টোকা বাঙালি গবেষক ছাত্র (পরে অধ্যাপক) যদুনাথ সিংহের থেকে। ১৯১৭ সালে যদুনাথ এমএ পাশ করার পর তার গবেষণা পত্রের প্রথম খন্ড ও দ্বিতীয় খন্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা করেন। সেখান থেকেই চুরি করে সেই গবেষণা রাধাকৃষ্ণণ ১৯২৭ সালে লন্ডন থেকে নিজের নামে প্রকাশ করেন। প্রকাশের পর বিষয়টা যদুনাথ সিংএর নজরে আসে। এবং ১৯২৯ সালে ২২ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। অনেক দিন মামলা চলার পর ‘আউট অফ কোর্ট সেটেলমেন্ট’ হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থিসিস চোর রাধাকৃষ্ণণকে বাঁচিয়েছিল। প্রবল চাপ সৃষ্টি করে বাঙালী গবেষক ডঃ যদুনাথ সিংহকে বাধ্য করেছিল অসাধু চোর চিটিংবাজ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের বিরুদ্ধে যদুনাথের থিসিস চুরি করে নিজের নামে চালানোর বিরুদ্ধে আদালতের কেস তুলে নিতে। যদুনাথ সিংহের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে তরুণ গবেষক যদুনাথের পাশে বিবৃতি দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, মডার্ন রিভিউয়ের রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তাবড় বাঙালি চিন্তক ও দিকপালরা। এহেন অসৎ ও শিক্ষকতার নামে কলঙ্ক গোছের ব্যক্তি রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিনে শিক্ষক দিবস পালন করা বাঙালি জাতির জন্য এক জাতীয় লজ্জা ও গ্লানির কারণ।
এই ঘটনার সকল তথ্য ১৯৩০-এর দশক থেকেই মজুত এবং ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত। কিন্তু এর থেকেই প্রমাণ হয় যে বাঙালি জাতির রক্তে ভারত স্বাধীন হয়েছে সেই স্বাধীন ভারতে বাঙালির কন্ঠ, বাঙালি শক্তি, সবকিছুকে কিভাবে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে দিল্লীর তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার এবং বাঙালিদের বাধ্য করেছে এই দিন পালন করতে, স্বাভাবিক করে নিতে্। কেন্দ্রীয় সরকারের বাংলা ও বাঙালি বিরোধী চরিত্র বর্তমানেও প্রখর যখন স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালির ভূমিকা মুছে দেওয়ার নিত্যনতুন উদাহরণ পাওয়া যাচ্ছে সেলুলার জেলের লাইট এন্ড সাউন্ড শো থেকে ১৫ই আগষ্ট লালকেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে।
বাংলা পক্ষ স্পষ্ট ঘোষণা করছে বাংলা ও বাঙালির শিক্ষক দিবস হল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন অর্থাৎ ২৫শে সেপ্টেম্বর। ৫ই সেপ্টেম্বর বাংলা ও বাঙালির শিক্ষক দিবস নয়। যিনি আমাদের বর্ণ, যিনি আমাদের পরিচয়, যিনি আমাদের বর্ণপরিচয় দিয়েছেন, যিনি আমাদের কুসংস্কারমুক্ত বৈজ্ঞানিক শিক্ষার দিকে নিয়ে গেছেন, যিনি আমাদের নারী সমাজকে মুক্ত করেছেন জ্ঞানের দুনিয়ায়, যিনি বিধবা নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুক্তি তর্ক ও পুঁথিকে ভিত্তি করে লড়েছেন, বাঙালি জাতির সেই মহান শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনই আমাদের জাতীয় শিক্ষক দিবস। বাংলা পক্ষ তথা বাংলার নানান সংগঠন ও স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং ইনস্টিটিউট বাংলা পক্ষ ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২৬শে সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষক দিবস পালন করে। ২৬ শে সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বিদ্যাসাগরের জন্মদিন কে শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করার যে দাবি, তাতে সমর্থন জানিয়েছেন নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি, পবিত্র সরকার, রুপম ইসলাম, তপোধীর ভট্টাচার্য, জয় গোস্বামী সহ ভারতে বাঙালি জাতির প্রায় সকল খ্যাতনামা শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা পক্ষর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গর্গ চট্টোপাধ্যায়, সাংগঠনিক সম্পাদক কৌশিক মাইতি, কলকাতা জেলার সম্পাদক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, উত্তর চব্বিশ পরগনা শিল্পাঞ্চলের জেলা সম্পাদক মামুদ আলি মণ্ডল, উত্তর চব্বিশ পরগনা শহরাঞ্চলের জেলা সম্পাদক পিন্টু রায়, হাওড়ার জেলা সম্পাদক মিঠুন মণ্ডল, উত্তর চব্বিশ পরগনা গ্রামীনের জেলা সম্পাদক দেবাশীষ মজুমদার, আইনজীবী বিদ্যায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরিবারের আত্মীয় অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতি বছরের মতো আগামী ২৬ শে সেপ্টেম্বর বাংলার প্রতিটা প্রান্তে সাড়ম্বরে শিক্ষক দিবস পালন করবে বাংলা পক্ষ। প্রতি জেলা থেকে একজন বিশিষ্ট শিক্ষকে শিক্ষায় অনন্য ভূমিকার জন্য “বিদ্যাসাগর জাতীয় শিক্ষক সম্মাননা” তে ভূষিত করবে বাংলা পক্ষ।
আসুন আমরা সকলে স্কুল-কলেজ-কোচিং সেন্টার- ক্লাব- অফিসে ২৬ শে সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করি।