বৃষ্টিপাতের কারণেই ফের ধ্বস দেখা দিয়েছে হরিশপুর গ্রামে

নিজস্ব সংবাদদাতা : পুরনো ধসের আতঙ্কেই দিন কাটছিল হরিশপুর গ্রামের। সেই আতঙ্ক আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠল এলাকায়। গত রাত্রে হরিশপুর গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় আবার ধসের ঘটনা সামনে এসেছে। আর তা নজরে আসার পর থেকেই নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গ্রামে মানুষ। আতঙ্কের সুরে গ্রামবাসীরা বলছেন, আবার গ্রামের অবশিষ্ট বাড়িঘর মাটির তলায় চলে যেতে বসেছে। মাথার উপর ছাদ হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

     

    ঘটনার সূত্রপাত, ২০২০ সালের ১৪ই জুন। ওইদিন দুপুর ১:৩০ মিনিট নাগাদ ওই এলাকায় প্রথম বিশালাকার ধসের ঘটনা সামনে আসে। তখন বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল অন্ডালের হরিশপুর গ্রামের মাটি। হুড়মুড়িয়ে একাধিক বাড়িঘর ভেঙে পড়ে যায়। একাধিক বাড়ি মাটির নিচে তলিয়ে যায়।কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই, ভিটেমাটি হারা হয়ে যান গ্রামবাসীরা। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে ওঠার পর, গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেন বিষয়টা। গ্রামের সামনে থাকা ইসিএলের খোলা মুখ খনির কয়লা উৎপাদনের কারণেই ধসে তারা সর্বসান্ত হয়েছেন, এমনটাই অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসী।

     

    তবে সেসময় ইসিএল ও রাজনৈতিক নেতারা গ্রামে এসে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মিলেছিল পুনর্বাসনে আশ্বাসও। প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসক, বিরোধী-সব দলের তরফ থেকে শুধুই আশ্বাস পেয়েছেন হরিশপুর গ্রামের মানুষ। কিন্তু বাস্তবে কিছুই পাননি তারা। এমনটাই বলছেন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ।সেদিনের ধসের আতঙ্ক এতটাই ছিল যে, গ্রামবাসীদের বেশিভাগ মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। আশ্রয় নিয়েছিলেন শরণার্থী শিবিরে। যারা আর্থিকভাবে একটু স্বচ্ছল ছিলেন, তারা গ্রাম ছেড়ে তারা অন্যত্র গিয়ে বসবাস শুরু করছেন। কিন্তু গ্রামের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের, যারা আর্থিকভাবে ততটা পোক্ত নন, তাদের পক্ষেও দীর্ঘদিন বাইরে থাকা সম্ভব ছিল না।তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা ফিরে এসেছেন ধস কবলিত গ্রামে। তিন বছর ধরে গ্রামের ওই মানুষগুলি আতঙ্ক সঙ্গী করে দিন কাটাচ্ছেন। পুনর্বাসন নিয়ে বারবার গ্রামবাসীরা বহু আন্দোলন করেছেন। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনও কাজই হয়নি গ্রামের অসহায় মানুষদের জন্য। তাদের স্বার্থের কথা ভাবেনি কেউই। সেদিনের ঘটনার পর তিন বছর পর আজও হরিশপুর গ্রামের মানুষ পুনর্বাসন পাননি।আতঙ্কের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন ধস কবলিত গ্রামেই। হরিশপুর আছে সেই হরিশপুরেই। ক্ষতিপূরন বা পুনর্বাসন কিছুই মেলেনি। তিন বছর আগের সেই দুপুরের ঘটনা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠেন হরিশপুরের বাসিন্দারা।

     

    গত কয়েকদিন ধরে খনি অঞ্চলে বেড়েছে বৃষ্টিপাতের মাত্রা। বৃষ্টিপাতের কারণেই ফের ধ্বস দেখা দিয়েছে হরিশপুর গ্রামে। সেই পুরনো আতঙ্ক নতুন করে গ্রাস করছে গ্রামের মানুষ। এদিন সকাল থেকেই আতঙ্কিত গ্রামের মানুষ। কি করবেন, কোথায় যাবেন এটা ভেবেই তারা আকুল।কারণ, উন্নতির জন্য আশ্বাস পেয়েছেন অনেক। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। আজ তারা কার কাছে যাবেন? কোথায় গেলে তাদের সমস্যার সমাধান হবে? এই প্রশ্নই তাড়া করছে গ্রামবাসীদের।