১১৩ বছর পরে যোগেশ চন্দ্র বসুর লেখা পাণ্ডুলিপি উদ্ধার, গ্রন্থাকারে প্রকাশ কাঁথির বসুধামে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কাঁথি: অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার কাঁথির প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব তথা মেদিনীপুরের ইতিহাস প্রণেতা যোগেশ চন্দ্র বসু ১৯১০ সালে কাঁথির বসুধামে বসে লিখেছিলেন “বসুবংশ” নামক একটি গুরুত্বপূর্ন পাণ্ডুলিপি । এটাই তাঁর লেখা প্রথম কোন ইতিহাস রচনা । প্রায় ১১৩ বছর পরে সেই অধরা দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করলেন আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক সন্তু জানা। সন্তু জানা দীর্ঘদিন ধরে মেদিনীপুরের প্রাচীন সংবাদপত্র নিয়ে চর্চা করছেন। কাঁথি থেকে প্রকাশিত শতাব্দীপ্রাচীন ‘নীহার’ সংবাদপত্রের ( ১৯০১ – ১৯৮৯ ) সমস্ত আসল কপি ( সংখ্যায় প্রায় ৪৫০০ টি ) তিনি সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডভুক্তি একাডেমী গবেষণা কেন্দ্রে। সুদীর্ঘ অনুসন্ধানের পরে মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটি থেকে জনৈক কৃষ্ণচন্দ্র বসুর কাছ থেকে গবেষক সন্তু জানা বসুবংশ পাণ্ডুলিপিটির হদিস খুঁজে পান।

    সেই দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপিকে শতাধিক বছর পরে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হলো কাঁথির ঐতিহ্যশালী বসুধামে। মেদিনীপুরের আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন এই গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন এবং পরিশিষ্ট সংযোজনে সম্পাদনা করেছেন সন্তু জানা। প্রকাশক মেদিনীপুরের অরিন্দম’স প্রকাশনীর পক্ষে অরিন্দম ভৌমিক । কাঁথির বসুধামে আয়োজিত এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. হরিপদ মাইতি, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. অমলেন্দু বিকাশ জানা, প্রাক্তন অধ্যাপক ড. হৃষিকেশ পয়ড়া, ইতিহাস গবেষক মন্মথনাথ দাস, সাংবাদিক সুব্রত গুহ, প্রাবন্ধিক সুদীপ মাইতি, বসু বংশের উত্তরাধিকারী ইরা বসু, সম্পাদক সন্তু জানা এবং সুদর্শন সেন, সুমন নারায়ণ বাকরা, শিবশঙ্কর সেনাপতি, সুদর্শন খাটুয়া, তপন রণজিৎ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ ।

    ১৯২১ সালে মেদিনীপুরের ইতিহাস লিখে যে প্রণম্য মানুষটি বাংলা ও বাঙ্গালীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, সেই যোগেশ চন্দ্র বসু আজ থেকে ১১৩ বছর আগে মেদিনীপুরের কায়স্থ বসুদের পুর্বপুরুষের ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে আঞ্চলিক ইতিহাসের যে অকথিত আকর দলিল তিনি তৈরি করে গিয়েছেন, আসলে তা বাংলার ইতিহাসের সম্পদ । এই গ্রন্থে উল্লেখিত রয়েছে অখণ্ড মেদিনীপুর জেলায় বসবাসকারী মাহিনগর বসুদের ৪২ পুরুষের কথা ও বংশলতিকা । বল্লাল সেন রাজ্যসভার হীরকখণ্ড দশরথ বসু, নবাব হুসেন শাহের নৌসেনা অধ্যক্ষ গোপীনাথ বসু ওরফে পুরন্দর খান, মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের মাইলস্টোন শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা মালাধর বসু ওরফে গুনরাজ খান থেকে শুরু করে মেদিনীপুরের স্বনামধন্য ইতিহাসবিদ যোগেশ চন্দ্র বসু অথবা ভারতরত্ন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু-কোথায় যেন এঁদের সকলকে একটি সূত্রে বেঁধে ফেলা হয়েছে এই গ্রন্থে । এছাড়াও, সম্পাদক সন্তু জানা গ্রন্থটির সঙ্গে যুক্ত করেছেন পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের রোমহর্ষক কাহিনি এবং দুষ্প্রাপ্য কায়স্থ মঙ্গলের সম্পূর্ন শ্লোক। এক কথায় বলা যায়, পটাশপুরের ভূমিপুত্র তথা কাঁথির দিকপাল শিক্ষাবিদ যোগেশ চন্দ্র বসুর লিখিত এই গ্রন্থ প্রকাশের ফলে দাঁতনের সন্তু জানার হাত ধরে মেদিনীপুর জেলার ইতিহাস আরও একবার নতুন করে সমৃদ্ধ হল।