|
---|
বাবলু হাসান লস্কর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা : বেশ কয়েক মাস যাবত ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যাওয়ার দরুন বিগত একমাস ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ও কুলতলি এলাকায় জলসংকট চরমে পৌঁছেছে। বেশিরভাগ টিউবওয়েলে গুলিতে জল আসছে না, দু’একটিতে যদিওবা ক্ষীণ হয়ে পড়ছে, তা এলাকাবাসীর চাহিদার তুলনায় এতটাই অল্প যে পানীয় জল সংগ্রহের জন্য একমাত্র ভরসা ওই হাতে গোনা কয়েকটি। টিউবওয়েলের সামনে সারাদিন লম্বা লাইন। এলাকাবাসীর চাহিদা মেটাতে গিয়ে এই কটা টিউবওয়েলেরও (বাকিগুলোর মতো) বন্ধ হয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। অথচ কটাদিন আগেও ছবিটা ছিল অন্যরকম। রাজস্থান বা অন্যান্য শুষ্ক অঞ্চলে কুয়োর সামনে লম্বা লাইনের ছবি সংবাদপত্রে দেখলেও নদী প্রধান সুন্দরবন লাগোয়া অঞ্চলে যে এমন মাত্রায় জল সংকট হতে পারে, তা ছিল এলাকাবাসীর ভাবনার অতীত।
তবে সুন্দরবন লাগোয়া অঞ্চলে ভৌগোলিক অবস্থার দরুণ জলের ভোগান্তি নতুন নয়। বিশেষত প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে পাণীয় জল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়। তার উপর গরমে প্রতিবছরই জলসংকট দেখা যায় এই অঞ্চলে। কিন্তু এবছর সেই সংকট চরমে পৌঁছেছে। পাণীয় জলের জন্য হাহাকার পড়ে গেছে এলাকায়। একের পর এক টিউবওয়েল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের হাহাকার বাড়ছে।
অন্যদিকে আরেকটি বিষয় ভীষণ উল্লেখযোগ্য, তা হল পাণীয় জলে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া। পশ্চিমবঙ্গের মূলত দুই ২৪ পরগনায় আর্সেনিকযুক্ত জল খেয়ে বহু মানুষ নানান ধরনের রোগের কবলে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জয়নগর- ১, বারুইপুর, সোনারপুর, মগরাহাট,-১-২, বজবজ, বিষ্ণুপুর ১-২, ক্যানিং ১-২ এই এলাকাগুলো আর্সেনিকপ্রবণ এলাকা বলে পরিচিত। অথচ এই সাইলেন্ট কিলার আর্সেনিকের বিষক্রিয়া রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকার তৎপর হয়নি। আমাদের ধারণা ছিল, সুরক্ষিত পাণীয় জল মানে ১০০০ ফুটের গভীর নলকুপের জল। কিন্তু এখন জলস্তর এতটাই নেমে গেছে যে, ১৩০০ -১৫০০ নলকুপ পাইপ না লাগালে জল আসবে না। অথচ এই স্তরে আর্সেনিকের মাত্রা কত তা পরিক্ষীত নয়।
এপ্রিল মাস শেষ হতে চলল, এখনই এই ভয়ানক জলকষ্টে ভুগছে এলাকাবাসী। এরপর ওই গুটিকয়েক চালু টিউবওয়েলে জল আসা বন্ধ হলে, মে মাসের গরমে পাণীয় জলের সংকট কত মানুষের প্রাণ কাড়বে তার হিসেব পাওয়া যাবে না। এই অবস্থায় জয়নগর ও কুলতলির সাধারণ মানুষের স্বার্থে APDR জয়নগর শাখার পক্ষ থেকে দাবি জানায় জয়নগর ও কুলতলি সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক কে ।
১) অবিলম্বে জয়নগর ও কুলতলি এলাকার বাসিন্দাদের জন্য আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে।
২) এলাকায় অকেজো টিউবওয়েলগুলো অবিলম্বে সারানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) যেসব এলাকায় পাণীয় জলের সংকট দেখা দিচ্ছে সেখানে অবিলম্বে ভ্রাম্যমাণ জলের গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে।