স্বপ্ন পূরণ করতেই পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল সাহিন আখতার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হল না তাঁর

নিজস্ব সংবাদদাতা : নার্স হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতেই পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল উচ্চ মাধ্যমিকে কৃতি পড়ুয়া। শ্রমিকের কাজ করে টাকা জমিয়ে বেঙ্গালুরুতে নার্সিং পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল সাহিন আখতারের। অনেক স্বপ্ন নিয়েই তাই বাবার সঙ্গে মিজোরাম পাড়ি দিয়েছিল সাহিন। সেই স্বপ্ন আর পূরণ হল না সাহিনের। মিজোরামে নির্মীয়মাণ রেল ব্রিজ ভেঙে মৃত্য হল তার। তবে দূর্ঘটনার কবলে পড়লেও বেঁচে যান সাহিনের। তিনি বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন।

     

    ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছাত্র সাহিন। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই কাজকর্ম করত সে। ১৮ বছর পূর্ণ হতেই ভিন রাজ্যের শ্রমিকের কাজে পাড়ি দেয় বাবার সঙ্গে। শ্রমিকের কাজ করেই উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফল করে।উচ্চ মাধ্যমিকে ৪১০ নম্বর পায় পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে সাহিন আখতার। সাহিনের ইচ্ছে ছিল বেঙ্গালুরুতে গিয়ে নার্সিং ট্রেনিং করবে। তার জন্য মোটা টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা রোজগার করার জন্যই কলেজে ভর্তি না হয়ে শ্রমিকের কাজে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিল সে।পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রতুয়ার চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা টফিট। পেশায় তিনি পরিযায়ী শ্রমিক। পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সাহিন আখতার। অভাবী সংসারে পড়াশোনার পাশাপাশি সাহিন ও ভিনরাজ্যে পাড়ি দেয় শ্রমিকের কাজে। পরিবারের পক্ষ থেকে গত তিন মাস আগে তার বিয়েও দেওয়া হয়। নববধূকে বাড়িতে রেখে স্বপ্ন পূরণ করতে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজে পাড়ি দিয়েছিল সাহিন। সেখানে কিছুদিন কাজ করেই মোটা টাকা জমিয়ে সে টাকায় নার্সিং ট্রেনিং করতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁর। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

     

    মিজোরামে রেল ব্রিজে কাজ করার সময় নির্মীয়মাণ ব্রিজের একাংশ ভেঙে মালদহের অন্তত ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর৷ তার মধ্যে রয়েছে সাহিনও। সাহিনের মৃত্যুতে গোটা পরিবারের স্বপ্ন ব্যর্থ হল। মৃতের মা সাহিনা বিবি বলেন, আমার ছেলে পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল। উচ্চমাধ্যমিকের পর ছেলে চেয়েছিল বেঙ্গালুরুতে গিয়ে নার্সিং ট্রেনিং করতে। আর্থিক অনটন থাকায় টাকা জোগাড় হচ্ছিল না। তাই ছেলে টাকা জোগাড় করতেই শ্রমিকের কাজে গিয়েছিল। আমার ছেলে বলতো, আমি চাকরি পাবই। আমার ছেলে আজ দুর্ঘটনায় মারা গেল।

     

    পরিবারের সবারই আশা ছিল, মেধাবী সাহিন ভবিষ্যতে কিছু করতে পারবে। পরিবারের সেই স্বপ্নও ছারখার হয়ে গেল মিজরামের দুর্ঘটনায়। তাঁর মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছাতেই শোকাহত গোটা এলাকা। এলাকায় মেধাবী ছাত্র হিসাবে পরিচিত ছিল সে। তাঁর এমন অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পাড়া-প্রতিবেশীরাও। সাহিনের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত সবাই।