এই প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে স্যামের অস্ট্রেলিয়া আগেভাগেই ইতিহাস করে ফেলেছে

নিজস্ব সংবাদদাতা : মাঝমাঠের কাছে বল পেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছেন বাংলার মেয়ে স্যাম। অসহায় লাগছে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের। স্যামের গতি এবং পায়ের জাদুতে দিশেহারা তাঁরা। কী করবেন, বুঝতে পারছেন না। তারই মধ্যে ২৫ গজ দূর থেকে গোলার মতো শট নিলেন স্যাম। বিপক্ষের গোলের একেবারে টপ কর্নারে আছড়ে পড়ল বল। অনেক চেষ্টা করেও বলের ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারলেন না গোলকিপার। গোওওওওওওওল! গোওওওওওওল! চ্যাম্পিয়ন ভারত!!আজ থেকে ৫৪ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার তারকা ফুটবলার স্যাম কেরের পরিবার যদি অস্ট্রেলিয়ায় না চলে যেত, তাহলে আজ হয়তো ভারতের মহিলা দলের ম্যাচে এরকমই শোনা যেত। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং ইংরেজিতে বারবার সেরকম ধাঁচেই ধারাভাষ্য শুনতে হচ্ছে ভারতবাসীকে। আরও বেশি করে বলতে গেলে কলকাতার মানুষের কানে যেন ইংরেজি ধারাভাষ্যের বাংলা সংস্করণ বাজছে। কারণ বুধবার মহিলা ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একমাত্র গোলটা করেছেন, সেই স্যাম কেরের সঙ্গে কলকাতার যোগসূত্র আছে।অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ গোলদাতা স্যামের পারিবারিক ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ১৯১২ সালে কলকাতায় (তৎকালীন ক্যালকাটা) জন্মগ্রহণ করেছিলেন স্যামের দাদু ডেনজিল মাউব্রে কের। পেশায় ধাতুবিদ ছিলেন তিনি। সঙ্গে বাংলার হয়ে বক্সিংও করতেন। ডেনজিলের স্ত্রী তথা স্যামের ঠাকুমা কোরাল বেরিল কেরও কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনিও খেলাধুলো করতেন। বাস্কেটবল খেলতেন। পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে রজার জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালে তাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। সেখানে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থের শহরতলিতে থাকতে শুরু করেন।সেই পার্থেই ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন স্যাম। যিনি ভারতেও এসেছেন। ভারতে আসার আগে ফোর্বসকে একটি সাক্ষাৎকারে স্যাম বলেছিলেন, ‘ভারতীয় যোগ নিয়ে আমি অত্যন্ত গর্বিত। আমি জানি, আমার ঠাকুমা এটা ভেবে অত্যন্ত গর্বিত যে আমি যখনই ওখানে যাব এবং খেলব, তখন খুদে ভারতীয় মেয়েদের প্রতিনিধিত্ব করব।’ সেইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘(এর আগে) কখনও আমি ভারতে যাইনি। ভারতের সঙ্গে আমি আরও জড়িয়ে পড়তে চাই। আমার ভারতীয় যোগসূত্র এবং সংস্কৃতির বিষয়ে অনেক কিছু শিখতে চাই।’আর সেই মেয়েটার আজ স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠার যে স্বপ্ন ছিল অস্ট্রেলিয়ার, তা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। ৩-১ গোলে হেরে গিয়েছেন ‘মাতিলদাস’-রা। চোটের জন্য এবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল পর্যন্ত একটি ম্যাচেও প্রথম থেকে শুরু করতে না পারলেও বুধবার সেমিফাইনালে অবিশ্বাস্য গোল করে অস্ট্রেলিয়াকে সমতায় ফিরিয়ে এনেছিলেন স্যামই। কিন্তু স্বপ্ন সত্যি হয়নি তাঁর। তবে এই প্রথমবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে স্যামের অস্ট্রেলিয়া আগেভাগেই ইতিহাস করে ফেলেছে। আর টিভি বা মোবাইলের স্ক্রিনে সেই ইতিহাসের সাক্ষী থেকে কলকাতায় বসে হয়তো কোনও মেয়ে স্বপ্ন দেখছে, বিপক্ষের গোলের টপ-কর্নারে আছড়ে পড়ছে তাঁর শট।