টানা বৃষ্টিতে ফুঁসছে দারকেশ্বর নদ! আতঙ্কের প্রহর গুনছে বাঁকুড়ার ভাদুল মল্লপাড়া গ্রামের ৭০টি পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা : টানা বৃষ্টিতে ফুঁসছে দারকেশ্বর নদ। আর সেই দারকেশ্বরের বুক দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে চলা জলের স্রোতে ভেঙে পড়ছে ঝুরঝুরে বালির পাড়। ধীরে ধীরে গ্রামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নদী। মাঝে আর মাত্র ফুট চল্লিশ বাকি। তার পরেই গ্রামে ঢুকে পড়বে নদী। সব হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্কের প্রহর গুনছে বাঁকুড়ার ভাদুল মল্লপাড়া গ্রামের ৭০টি পরিবার।বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের ভাদুল মল্লপাড়ার অবস্থান দারকেশ্বর নদের ধারেই। সব মিলিয়ে গ্রামে বসবাস ৭০টি পরিবারের। অধিকাংশই দিন আনি, দিন খাই পরিবার। গত কয়েক দিনের নিম্নচাপের বৃষ্টি এই পরিবারগুলির রাতের ঘুম কেড়েছে। প্রতি দিন একটু একটু করে চোখের সামনে বেড়েছে দারকেশ্বর নদের জলস্তর। জলস্তরের উচ্চতা যত বেড়েছে, ততই গ্রাম লাগোয়া দারকেশ্বরের নদীখাত দিয়ে বেগে বইতে শুরু করেছে জল। সেই জলের ধাক্কায় মল্লপাড়া গ্রাম লাগোয়া কয়েকশো ফুট পাড়ের বালিমাটি অনবরত ভেঙে পড়ছে জলে। ভাঙনের সেই শব্দই বুকে কাঁপন ধরাচ্ছে মল্লপাড়া গ্রামের মানুষের। ভাঙনের জেরে নদীখাত একটু একটু করে এগিয়ে আসতে আসতে এখন এসে দাঁড়িয়েছে গ্রাম থেকে ফুট চল্লিশ দূরে। গ্রাম লাগোয়া নদীর পাড়ে ভাঙন যে ভাবে হচ্ছে, তাতে এই সামান্য ফারাকটুকুও যে কখন মুছে গিয়ে বাড়ি ঘর সমেত নদীগর্ভে মিশে যাবে, সেই আশঙ্কাই এখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে গ্রামের সকলকে । ইতিমধ্যেই গ্রামবাসীদের নদী তীরবর্তী ফসলের জমির একাংশ বিলীন হয়ে গিয়েছে দারকেশ্বরের গর্ভে। কষ্টে ফলানো ফসল ভেসে গিয়েছে বন্যার জলে। সেই লোকসান ছাপিয়ে এখন গ্রামবাসীদের এখন শুধুই সব হারানোর আশঙ্কা। স্থানীয়দের দাবি, ভাঙনের সমস্যা মেটাতে বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। প্রতিটি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতাদের তরফে পাড় বাঁধানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয় । কিন্তু নির্বাচন মিটে গেলে মল্লপাড়া পড়ে থাকে সেই তিমিরেই।

     

    মল্লপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মিঠু মল্ল বলেন, ‘‘আমরা একেবারে নদীর ধারেই থাকি। ভাঙনে নদী দ্রুত এগিয়ে আসছে গ্রামের দিকে। কিন্তু কোনও প্রশাসনিক আধিকারিক আমাদের খোঁজ রাখেননি। এ বার নিরুপায় হয়ে বাঁচার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।’’ গ্রামের বাসিন্দা গনেশ মল্ল, ‘‘বারবার প্রশাসনের কাছে নদীর পাড় বাঁধানোর আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু নদীর পাড়ে এক ঝুড়ি মাটিও দেয়নি প্রশাসন। এ বার পরিবার পরিজন নিয়ে গোটা গ্রাম জলে তলিয়ে গেলে হয়তো ঘুম ভাঙবে প্রশাসনের।’’ বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বিডিও শুভব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মল্লপাড়া গ্রামের পরিস্থিতি আমাদের নজরে আছে। ভাঙনের বিষয়টি সেচ দফতরকে জানানো হয়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা আজই ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। তাঁরাই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’’