সাথে থাকা পুরনো দিনের নেতৃত্ব বা প্রবল রাজনৈতিক বিরোধিতা করা নেতৃত্ব শোনালেন তাদের প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, নতুন গতি, নদীয়া: প্রয়াত হলেন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও নদিয়া জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অজয় দে । আজ সকাল 9 টা নাগাত কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয় বলেই সূত্রের খবর । বিধানসভা নির্বাচনের পরবর্তীকালে 29 শে এপ্রিল শারীরিক সমস্যা জনিত কারণে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন । প্রথম দিকে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও তারপর আবার তার অবস্থার অবনতি ঘটে , প্রথমে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারণে ভর্তি হলেও তার শরীরে কভিড 19 এর সংক্রমণ ঘটে বলে খবর পাওয়া গেছে ।

    শান্তিপুর বাসি তাদের দীর্ঘদিনের এক অভিভাবককে হারালো । অজয় দের মৃত্যুতে সমস্ত শান্তিপুর জুড়ে প্রবল শোকের ছায়া নেমে এসেছে । অজয় দের জেষ্ঠ্য ভ্রাতা অসমন্জু দের মৃত্যুর পরেই তার প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়েছিল । শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল উচ্চ বিদ্যালয় এবং শান্তিপুর কলেজ থেকে তার পড়াশোনার পাঠ সমাপ্ত করার পর শান্তিপুর ইলেকট্রিক অফিসে কর্মরত ছিলেন । তার জেষ্ঠ্য ভ্রাতা মারা যাবার পরে তিনি জীবনের প্রথম 1984 সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ভেঙ্গে পড়লেও পরবর্তীকালে শান্তিপুরের অপর আর এক বর্ষিয়ান রাজনৈতিক নেতা কুমারেশ চক্রবর্তীর সহযোগিতায় পুনরায় রাজনৈতিক ময়দানে ফিরে এসে পরাজিত করেছিলেন বিমলানন্দ মুখার্জিকে , সেটা ছিল 1991 সাল । যদিও তার আগেই শান্তিপুর পৌরসভার পৌরপতি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন 1990 সালে । 1991 সালে প্রথম কংগ্রেসের বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হবার পর 1996,2001,2006,2011 সাল পর্যন্ত সর্বমোট পাঁচ বার জাতীয় কংগ্রেসের টিকিটে শান্তিপুর বিধানসভার কংগ্রেসের বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হয়ে ছিলেন । তত্কালীন সময়ে প্রবল বাম পন্থী হাওয়া অভ্যাহত ছিল বাংলার রাজনীতিতে । এরপর 2014 সালের উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে পুনরায় জয়ী হন অজয় হন অজয় দে ।

    এর পরবর্তী কালে 2016 এবং এই বছর অর্থাৎ 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে তার বিজয় রথ চক্র স্তব্ধ হয়ে গেলো । আজ অর্থাৎ 2021 সালের 21 শে মে বাংলার আকাশ থেকে এক রাজনৈতিক নক্ষত্রের পতন ঘটলো । তার সাথে অবসান ঘটলো এক রাজনৈতিক যুগের ।
    ষাটের দশক থেকে একসাথে পথ চলা, পরবর্তীতে অবশ্য বিরোধিতা করা বর্ষিয়ান ডানপন্থী নেতৃত্ব কুমারেশ চক্রবর্তী ভেঙে পড়েন কান্নায়! তিনি বলেন “আমার থেকে পাঁচ বছরের ছোটো, রাজনৈতিক রণাঙ্গনে লড়াই থাকলেও প্রথমদিকের স্মৃতিগুলো ক্রমশ ক্লান্ত করছে আমায়।”
    শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দ মৈত্র জানান, “রাজনীতি আঙ্গিনা পেরিয়েও দাদাভাইয়ের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল আমাদের, অভিভাবকহীন হলাম।”

    সিপিআইএম এরিয়া কমিটি সম্পাদক সৌমেন মাহাতো জানান, “রাজনৈতিক প্রবল বিরোধিতা থাকলেও সৌজন্যতা বজায় রাখতেন সব সময়, একজন সুদক্ষ প্রশাসককে হারালো শান্তিপুর।”

    2021 বিধানসভা নির্বাচনে অজয় দেব অপর এক প্রতিপক্ষ জাতীয় কংগ্রেসের ঋজু ঘোষাল বলেন, নির্বাচনে প্রচারের প্রতিযোগিতার মধ্যেও ফোনে কথা হতো আমাদের, হাসপাতালে প্রথম ভর্তি হয়েছিলেন সেদিনও কথা হয়েছিলো শান্ত ধীর স্থির মানুষটি ছিল আমার শ্রদ্ধার।”

    শান্তিপুরের প্রাক্তন বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের জানান “বেলভিউতে ভর্তি হওয়ার পর আমি দেখতে গিয়েছিলাম, খুব কম বারের জন্য সামনাসামনি হয়েছিলাম। বলেছিলেন শান্তিপুর এসো কথা হবে।”

    রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের সংসদ জগন্নাথ সরকার সদ্যসমাপ্ত হওয়া বিধানসভায় জয়ী হন, আজ তিনিও বিষন্ন ভারাক্রান্ত, বলেন বিরোধী সমস্ত দলের মধ্যে অজয় দে র রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, ধৈর্য এবং প্রশাসনিক দক্ষতা, শিক্ষনীয়।

    তবে সমগ্র শান্তিপুর বাসী প্রতীক্ষায় রয়েছেন, তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। দলীয় কর্মী সমর্থকরা উদগ্রীব একবার তার তৈরি তৃণমূল ভবনে আনার জন্য। তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায় প্রশাসনিক মহলে কথা চলছে, অনুমতি পেলে মৃতদেহ শান্তিপুরে নিয়ে আসা হবে, শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে শান্তিপুর মহাশ্মশানে।