ইতিহাস সৃস্টি, ওয়ার্ল্ড বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ছ’বার সোনা জয় ম্যাগনিফিসেন্ট মেরির।

সাইফুদ্দিন মল্লিক, নতুন গতি :  ইতিহাসই তিনি এবং ইতিহাস গড়লেন! রেফারির ঘোষণার পরই হাততালিতে ফেটে পড়ল দিল্লির কেডি যাদব ইন্ডোর স্টেডিয়াম। ওয়ার্ল্ড বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ছয় বারের জন্য সোনা জিতলেন ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি কম। আর সেই সঙ্গে ছুঁয়ে ফেললেন কিউবার কিংবদন্তি বক্সার ফেলিক্স স্যাভনকে।

    তিনি যে দমে যাওয়ার পাত্র নন, সেটা আগেও প্রমাণ করেছিলেন মণিপুরের প্রান্তিক গ্রাম কাঙ্গাথেইয়ের এই মেয়েটি। রিংয়ের ভিতরে কী ভাবে জ্বলে উঠতে হয় শনিবার নয়াদিল্লিতে দেখিয়ে দিলেন মেরি। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইউক্রেনের হানা ওখাতাকে ৪৮ কেজি লাইটওয়েট বিভাগে ৫-০তে ধরাশায়ী করেন তিনি। সেই সঙ্গে একমাত্র মহিলা বক্সার হিসেবে ছ’বার সোনা জেতার নজির গড়লেন।

    রিংয়ে পা রাখার আগেই ফাইনালে ফেভরিট ছিলেন ভারতীয় বক্সার। ইতিহাস গড়া যে শুধুই সময়ের অপেক্ষা সে আত্মবিশ্বাস ছিল মেরি কমের। এমনকী তাঁর প্রতিপক্ষ ইউক্রেনের হান্না ওখোতাও জানতেন এ দেশের মাটিতে মেরি কমকে হারানো ‘মুশকিলই নয়, নামুনকিন’। মাস তিনেক আগে অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী এই ভারতীয় বক্সারের কাছে মুখ থুবড়েও পড়েছিলেন হান্না। মনে মনে যেন জানতেনই যে সে ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। তাই হারের আগেই একপ্রকার হেরে বসেছিলেন হান্না।

    এর আগে ২০০২, ২০০৫, ২০০৬, ২০০৮ এবং ২০১০ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন মেরি কম। তারও আগে ২০০১ সালে এই প্রতিযোগিতায় ঘরে তুলেছিলেন রুপো। এভাবে টানা বিশ্ব বক্সিংয়ে পদক জিততে কোনও মহিলা বক্সারকে দেখা যায়নি। তাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মঞ্চে মেরি কমকে ঘিরে অন্যরকম আকর্ষণ ও উত্তেজনা থাকে প্রতিবারই। এবার ফাইনালের টিকিট পাকা হতেই চোখে পড়ে একই উন্মাদনা। কিন্তু বয়সটাই একটা ফ্যাক্টর ছিল। তবে ৩৫ বছরের মেরি কম বুঝিয়ে দিলেন, কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা থাকলে সবই সম্ভব। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে আইরিশ বক্সার কেটি টেলরের রেকর্ড (৫ সোনা ১ রুপো) তিনি স্পর্শ করেছিলেন আগেই। এদিন তাঁকেও টপকে গেলেন। প্রথম মহিলা বক্সার হিসেবে ছটি সোনার মালিক হলেন মেরি কম।

    এ দিনের ম্যাচ জয়ের পর নিজের আবেগকে ধরে রাখতে পারেননি কাঙ্গাথেইয়ের মেয়েটি। চোখ ভিজে গিয়েছিল কান্নায়। তাঁর প্রতি অজস্র ভালবাসা ও সমর্থনের জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেরি বলেন, “সেই সব ফ্যানদের ধন্যবাদ দিতে চাই যাঁরা এ দিন স্টেডিয়ামে এসে আমার জন্য গলা ফাটিয়েছেন, ভারতের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন।” জয়ের পর সোনার পদক দেশকে উৎসর্গ করলেন তিনি।