“ভ্রাতৃত্বই রাজনৈতিক সমাধান” শীর্ষক প্রচারাভিযান ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্ট-এর

             “ভ্রাতৃত্বই রাজনৈতিক সমাধান”

মধ্যযুগের বাঙালি কবি বড়ু চণ্ডীদাসের অমর মানবিক উচ্চারণ ছিল, ‘সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। তবে, ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাতাবরনে একথা মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, ‘সবার উপরে ধর্ম সত্য মানুষ সেখানে নাই’। ভারতীয় সমাজে আবহমান কাল থেকেই পরস্পর বিরোধী মতামত ও চিন্তা পাশাপাশি সহাবস্থান করেছে। কোনও একটি মতের আধিপত্য নিয়ে ভারতীয় সমাজ বেঁচে থাকেনি। ধর্ম, রাষ্ট্র, খাদ্য, পোশাক, আচার, সংষ্কৃতি; সব ক্ষেত্রেই নানা মত ও ভাবনা সম্মিলিত হয়েছে। আমাদের দেশপ্রেম কখনই পাশ্চাত্যের nationalism-এর মত নয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই অযৌক্তিক, স্বার্থমগ্ন, একচেটিয়া স্বতন্ত্র একটা জিনিস। বিচিত্র কে মেলাবার শক্তিই ভারতীয় সভ্যতার মূল কথা । uniformity-র চেয়ে unity ও social harmony বড় বিষয়। ভারত পাশ্চাত্যের ধারনায় গড়ে ওঠা কোনো সর্বত্রগামী, সর্বগ্রাসী, মনুষ্যত্ব হননকারী একটি রাষ্ট্রযন্ত্র নয় বরং এখানে যুগে যুগে মানুষের ব্যাক্তি-স্বাধীনতা, মুক্ত সমাজ ও বহুত্ববাদী চিন্তার প্রসারকে লালন করা হয়েছে। সারা বিশ্ব এই ভারতভূমিকে জীবন সংগ্রামের ও জীবনসাধনার পুণ্যভূমি বলেই জেনে এসেছে। ভারতের ইতিহাস কারও স্বতন্ত্র ইতিহাস নয়। ভারতের ইতিহাস তত্ত্বের ইতিহাস নয়, তা সত্যের ইতিহাস। যে মহান সত্য নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অন্যত্র এক ধর্ম এসে অন্য সব ধর্ম কে উচ্ছেদ করেছে। ভারতীয় সাধনা প্রমাণ করেছে ভারতে সর্বধর্ম সমন্বয় সহজ, সরল জীবনচর্যার বলিষ্ঠ প্রকাশ। গায়ের জোরে বিরোধীদের কন্ঠরোধ করে নয়, বুদ্ধি দিয়ে, যুক্তি দিয়েই তো বিরুদ্ধ যুক্তিকে খণ্ডন করে এগিয়ে যেতে হয়। আশু যুক্তিকে চূড়ান্ত মনে করে পৃথিবীকে মেপে নেওয়ার সংকীর্ণতা যে মানবসভ্যতার পরিপন্থী।

    এই প্রসঙ্গে রাজ্য সভাপতি আরাফাত আলী বলেন সাম্প্রতিককালে ভারতবর্ষ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ধর্মীয় মেরুকরণ ও অসহিষ্ণুতা বিতর্কে। বর্তমানে সমগ্র দেশবাসীর সামনে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবসৃষ্ট দুর্যোগের নাম ধর্মীয় সন্ত্রাস। এই বিষাক্ত ধোঁয়ায় সারা দেশের আকাশ এখন আচ্ছাদিত। শান্তি ও প্রবৃদ্ধিই যদি সমস্ত সম্প্রদায়গত ধর্মের লক্ষ্য হয়, তাহলে তাকে ঘিরেই আজও কেনো এত হানাহানি, এত রক্তপাত, এত অশান্তি? আসলে কর্পোরেট মালিকদের বন্ধু, আপাদমস্তক সাম্রাজ্যবাদের মদদদাতা, কাজকর্মে ফ্যাসিস্ট একদল ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদী ধর্মের ব্যাবসা করে ক্ষমতার মসনদে বসে থাকতে চায়। এই জনবিরোধীদের শাসনকালে তাই বিপন্ন হয় জাতীয় সংহতি। নিম্নমুখী হয় দেশের প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন। রোজই বাড়ে জ্বালানী তেল, গ্যাস, চাল, ডাল প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। গরিব, কৃষক, শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত বা সাধারণ ব্যবসায়ীদের জীবন হয়ে ওঠে অসহনীয়। বিপর্যস্ত হয় সধারণের জীবন-জীবিকা। বিপর্যস্ত হয় কৃষি ব্যবস্থা। বেড়ে চলে কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান। বিপর্যস্ত হয় দেশীয় ব্যাংক ও দেশীয় সংস্থা। আর উল্টো দিকে বাড়তে থাকে নীরব মোদী, মেহুল চোকসিদের মত দেশের লুঠেরেদের সংখ্যা এবং হতে থাকে তাদের আয়ের বিকাশ। দেশের বাস্তুতন্ত্ৰ, বনাঞ্চল ও পরিবেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে আদানি-আম্বানির মত বেসরকারি শিল্পপতিদের একচ্ছত্র উদ্যোগের সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে বিছানো হয় রেড কার্পেট। এমন এক সংকট কালে বিশিষ্ঠ দার্শনিক ই.এফ. সুমাকারের একটি মন্তব্য স্মরণযোগ্য। তিনি বলেন_ “The rich corrupt themselves by practising greed and corrupt the rest of society by promoting envy.” একথা আজ আমাদের খুব ভালো করে বুঝে নিতে হবে যে, হিংসা সকল ভালো ভালো পরিকল্পনাকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। তাই উন্নয়নের প্রথম শর্তই হল শান্তি, মৈত্রী, অহিংসা, সংহতি ও সৌভ্রাতৃত্ব। গান্ধীজি আমাদের সতর্ক করে বলে গেছেন, “An eye for an eye makes the whole world blind.” তাই ভ্রান্তি জাতাভিমান ও ধর্মমোহের বশবর্তী হয়ে ঘৃণা, হত্যা ও প্রতিশোধ স্পৃহায় দেশের মধ্যে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করে আজ মুক্তি লাভ সম্ভব নয়। ভারতকে সবদিক থেকে সমুন্নত করে জগৎ সভার শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত করাতে গেলে আমাদেরকে আবারও ভারততীর্থের মহান ঐতিহ্যে দীক্ষিত হতে হবে। ন্যায়, সুবিচার ও সাম্যের নীতির উপর ভিত্তি করে মানবীয় ভ্রাতৃত্ব ও মানবীয় সংহতির পথেই উত্তরণের সূলুক সন্ধান করতে হবে। যেমন করে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “I see in my mind’s eye the future perfect India rising out of this chaos and strife, glorious and invincible, with vedantic brain and islamic body.”

    বর্তমান পরিস্থিতিকে সামনে রেখে ভারতের একটি জনকল্যাণকর ছাত্র-যুব সংগঠন ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্ট বসে না থেকে দেশকে সামগ্রিক দিক থেকে রক্ষা করতে “ভ্রাতৃত্বই রাজনৈতিক সমাধান”(সেপ্টেম্বর-অক্টোবর,২০১৯) -শীর্ষক প্রচারাভিযান পরিচালনা করছে।সারা বাংলার ছাত্র-যুবকদের কাছে ফোল্ডার, সভা ও সমাবেশে পদযাত্রা ও জনসংযোগের মধ্য দিয়ে এই বার্তা তুলে ধরছে পার্টির কর্মীরা।

    রোকাইয়া খাতুন
    জনসংযোগ সম্পাদক
    ফ্র্যাটারনিটি মুভমেন্ট
    পশ্চিমবঙ্গ
    8001677686