সরকারি উদাসীনতায় বঞ্চিত পুরোহিতরা, সহযোগিতায় প্রবাসী চিকিৎসক

সেখ সামসুদ্দিন : ২৩ ফেব্রুয়ারিঃ বর্তমানে আধুনিকতার যুগে সরকারি উদাসীনতায় ধুঁকছে পৌরহিত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি। একদিকে অর্থনৈতিক সঙ্কট, অপরদিকে সরকারি বোর্ডে একপ্রকার তালাচাবি। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিল, মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়মিত চললেও ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সংস্কৃত পরিষদ-এর পরীক্ষা বা শংসাপত্র প্রদান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এরজন্য রাজ্যে পৌরহিত্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চতুষ্পাঠী বা টোলগুলিতে প্রশিক্ষণ শেষে মূল্যায়ণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ব্রাহ্মণ সমাজ। মেমারি থানার আমাদপুর গ্রামে চালু থাকা ‘আর্য দর্শন চতুষ্পাঠী’ বা টোলের কথা জানতে পেরে মেমারির সন্তান আমেরিকায় কর্মরত প্রবাসী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ বুদ্ধদেব দাঁ কিছু পুস্তক ও শতরঞ্জি দিয়ে সহায়তা করেন। পৌরহিত্য প্রশিক্ষণে সহায়ক পুস্তকগুলির মধ্যে আছে অমরকোষ অভিধান, মিত্র লাভ, ত্রিবেদীয় শ্রাদ্ধ কান্ত পদ্ধতি, স্মৃতি চিন্তামণি, ভবদেব পদ্ধতি, শান্তি সত্তয়ন কলাদ্রুম, চৈতন্য চরিতামৃত, বিরাট পর্ব ইত্যাদি। এই টোলের অধ্যক্ষ সুধাময় গোস্বামী আক্ষেপ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সংস্কৃত পরিষদ বন্ধ থাকায়। যেখানে রাজ্য সরকার ইমাম ভাতা পুরোহিত ভাতা দিচ্ছেন সেখানে পুরোহিতদের মূল্যায়নে বোর্ডের কার্যকলাপ বন্ধ রেখে দিয়েছেন যা অত্যাশ্চর্য বলে মনে হয়। বর্তমানে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও পুরোহিতরা অশিক্ষিতের তালিকায় থেকে যাচ্ছেন। তারা পাচ্ছেন না তাদের মূল্যায়ন। টোলের কোষাধক্ষ্য শক্তিপদ আচার্য জানান তাদের পরিচালিত টোলে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন প্রান্ত হতে প্রাপ্তবয়স্ক থেকে বয়স্ক ৪২ জন নিয়মিত পৌরহিত্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রতি বৃহস্পতিবার ও শনিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ চলে। বছরের বিভিন্ন মহোৎসবের পূর্বে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় যেখানে প্রশিক্ষণ নেয়া ছাত্রদের বাইরেও বহু পুরোহিত আসেন প্রশিক্ষণ নিতে। টোলের সভাপতি পূর্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য সম্পাদক শ্যামল মজুমদার সহ উপস্থিত সকলে প্রবাসী চিকিৎসকের সহযোগিতা ও সান্নিধ্য পেয়ে বুদ্ধদেব দাঁ কে হার্দিক শুভেচ্ছা জানান। ডাঃ বুদ্ধদেব দাঁ বলেন ধর্মীয় সংস্কৃতি মানুষকে শেখায় শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে। হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠানে পুরোহিতদের ভুমিকা অগ্রগণ্য। সেই পুরোহিতদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি এক প্রকার লুপ্তপ্রায় বলা যায়। এরকম সংস্থার পাশে দাঁড়াতে পেরে তার যেমন ভাল লাগছে, আগামী দিনেও এ ধরনের সংস্থার পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসবেন।