|
---|
নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: অভাবের সংসারে অ্যানড্রয়েড ফোন বিলাসিতা। তাই করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পরীক্ষার নোটিশের কথা জানতে পারেনি বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমিত্রা সোরেন। করোনা পরিস্থিতিতে পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের কথাও জানতে পারেনি সে। দুদিন আগে কোনওরকমে টাকা জোগাড় করে একটি অ্যানড্রয়েড ফোন কিনেছিল সে। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে বুধবারই তার থার্ড সেমিস্টারের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষা দিতে এসেছিল সে। কিন্তু তার পরীক্ষা দেওয়া হল না। সে যে ফর্ম ফিলাপ করতে পারেনি। অ্যাডমিট কার্ড নেই তার। তাই কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদনই সার। পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিল না কেউই।
আর এই ঘটনা একটা বড় প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল চলতি শিক্ষা ব্যবস্থাকে। তবে কি বর্তমান পরিস্থিতিতে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া সুমিত্রার মতো মেয়েরা পড়াশুনা করতে পারবে না?
যাদের অ্যানড্রয়েড ফোন কেনার বা নিয়ম করে ফোনে রিচার্জ করার টাকা নেই তারা কি শিক্ষা অঙ্গনের বাইরে থেকে যাবে? শুধুই কি ধনী বা উচ্চবিত্ত পরিবারের লোকরাই পড়াশুনা করবে আজকের এই নিউ নরমাল ডিজিটাল যুগে?
পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষের রুপসায় বাড়ি সুমিত্রার। মা ও সে পরের চাষের জমিতে কাজ করে। দিনমজুরির টাকায় কোনওরকমে সংসার চলে। করোনা আবহে ডিজিটাল যুগে অভাবি সুমিত্রার কাছে একটা অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন না থাকায় তার একটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। ডিজিটাল যুগে তাঁর অর্থনৈতিক অক্ষমতায় একটা অ্যানড্রয়েড ফোন না কিনতে পারার কথাটা বারে বারে জানিয়েও কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কারও টনক নড়াতে পারেন নি তিনি।কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকলেরই জবাব, ওই ছাত্রী সময়ে ফর্ম ফিলআপ করেনি।সামনের বছর আবার সে পরীক্ষায় বসতে পারবে।
অভাবের সঙ্গে লড়াই করে কোনক্রমে স্নাতক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বর্ধমান ওমেন্স কলেজের বিএ থার্ড ইয়ারের এই ছাত্রী। স্নাতক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। তাঁর কথায়, একটা সাধারন ফোন ছিল। সেটাও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অর্থের হবে সরানো হয়নি। অ্যান্ড্রয়েড ফোন ছিল না। তাই অনলাইন ক্লাস করতে পারিনি। করোনার জন্য বাড়িতেই ছিলাম। দু-তিন দিন আগে টাকা জোগাড় করে একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনি। বন্ধুদের গ্রুপে অ্যাডও হয়েছিলাম। তখনই জানতে পারি বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষা।এর আগে যে ওয়েবসাইটে পরীক্ষার দিন ঘোষণা হয়েছে বা ফর্ম ফিলআপ হয়েছে কিছুই জানতে পারিনি। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এসএমএস পাঠাতো তাহলেও হয়তো এভাবে এক বছর নষ্ট হতো না। সুমিত্রার দাবি, আমার মত অনেকেই পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাঁদের কথা চিন্তা করে একটা ব্যবস্থা করা গেলে ভাল হয়।