|
---|
বাইজিদ মণ্ডল, ডায়মন্ড হারবার: সাংবাদিকদের কাজ মূলত বিভিন্ন ধরণের সংবাদ সংগ্রহ করা এবং সেই সংবাদ জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা বা পরিবেশন করা। অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও যেমন তাঁদের কাজ করতে হয়, আবার অনেকসময় কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বা কিছু জোটবদ্ধ মানুষের সামনেও তাঁদের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয় । বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিজস্ব অফিসেও সাংবাদিকরা উপরমহলের অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন, হয়তো তাঁর কোনো দোষ না থাকা সত্ত্বেও।ঘরে-বাইরে সাংবাদিকদের উপর ঘটে চলা বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ অনেক সময় করা হয়, কিন্তু নির্দিষ্ট বা শক্তিশালী কোনও সংগঠন না থাকায় সেই লড়াই ঠিকমত দানা বাঁধে না ।অগত্যা সেই লড়াই কোনো একজন সাংবাদিকের একক লড়াই হয়েই হয়তো অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়। অথবা রুটিরুজির সংস্থান করতে গিয়ে তাঁকে বা তাঁদেরকে হাঁটতে হয় আপোষের রাস্তায়।ঠিক এই চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে সাংবাদিকদের নিজস্ব সংগঠন “বেঙ্গল মিডিয়া ক্লাব”।এই সংগঠনটি প্রায় একার উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন “নমস্কার কলকাতা” সংবাদপত্রের সম্পাদক কওসার আলী।একদম প্রথমে, বছর খানেক আগে মুষ্টিমেয় কয়েকজন সাংবাদিককে পাশে নিয়ে শুরু করেছিলেন এই সংগঠন । ক্রমশ সময়ের সাথে সাথে পাশে পেয়েছেন আরো অসংখ্য সাংবাদিককে। বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে এই সংগঠন।গড়ে তোলা হয়েছে কার্যনির্বাহী সমিতি, যেখানে সভাপতির আসনে রয়েছেন তীর্থঙ্কর মুখার্জী এবং সম্পাদকের পদে রয়েছেন কওসার স্বয়ং।গড়ে তোলা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, যেখানে শুধুমাত্র বিভিন্ন সমস্যার কথাই সাংবাদিকরা পরস্পরের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন।বিভিন্ন জেলায় সেই জায়গার কিছু কিছু নির্বাচিত সাংবাদিককে দেওয়া হয়েছে সেই জেলার দায়িত্ব।সেই সব জেলা থেকেও যোগ দিচ্ছেন অনেক সাংবাদিক।২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে এই সংগঠনের সদস্যরা আয়োজন করেছিলেন বনভোজনের। মধ্যমগ্রাম সংলগ্ন সাজিরহাটে এই বনভোজনে নামমাত্র চাদার বিনিময়ে ছিল ভুরিভোজের আয়োজন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি তীর্থঙ্কর মুখার্জী, সম্পাদক কওসার আলী সহ “বেঙ্গল মিডিয়া ক্লাবে”র অসংখ্য সদস্য।এই সুন্দর দিনটিতে এলাকার বেশ কিছু প্রান্তিক মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হল কম্বল । বাচ্চাদের মধ্যে বিতরণ করা হল বিস্কুটের প্যাকেট।বেশ কয়েকজন অতিথির হাতে তুলে দেওয়া হল সংগঠনের তরফে প্রকাশিত নতুন বছরের ক্যালেন্ডার।এছাড়াও সদস্যদের হাতে আইডেন্টিটি কার্ড তুলে দিলেন সম্পাদক।
এদিনের বনভোজনে বেঙ্গল মিডিয়া ক্লাবের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন “ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি” এবং “প্রগতিশীল মুসলিম সমাজে”র সদস্যরাও। এঁদের মধ্যে অনেকে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন।এছাড়াও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি ও গানে-গল্পে মুখরিত হয়ে ওঠে বনভোজনের পরিবেশ । সবশেষে ছিল ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পরিবেশিত অনুষ্ঠান “অলৌকিক নয়, লৌকিক”।
আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যক সদস্য এ ধরনের অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ করুক, এটাই আলোচনা করছিলেন বেঙ্গল মিডিয়া ক্লাবের সদস্যরা। সংগঠনের সম্পাদক কওসার আলী জানালেন, আপাতত বিভিন্ন জেলায় সংগঠনের কর্মকান্ড ছড়িয়ে দেওয়া তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য এবং তার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো। বনভোজনের অনুষ্ঠান যখন প্রায় শেষ, তখন পশ্চিম আকাশে অস্ত যাচ্ছে সূর্য। আগামী দিনের ভোরে আবার উদয়ের প্রতিশ্রুতি জানিয়ে। “আমরা এই সংগঠনকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাব। সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যায় এবং তাদের সঙ্গে ঘটে চলা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদে এই সংগঠন সবসময় তাদের পাশে থাকবে, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য” বললেন সম্পাদক।পড়ন্ত সূর্যের প্রতিশ্রুতির মতোই অসম্ভব আত্মপ্রত্যয়ী মনে হল কওসার আলী’কে ।