আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বর্ধমানে নারীদের সম্মাননা জ্ঞাপন।

লুতুব আলি, বর্ধমান, নতুন গতি : ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বর্ধমানে এই দিনটি ঐতিহ্যের সঙ্গে পালন করা হয়। এদিন বর্ধমানের একাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গুলি এই দিনটি মর্যাদার সঙ্গে পালন করে। এদিনের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান হল বর্ধমান সদর প্যায়ারা নিউট্রিশন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির অনুষ্ঠান। এই সংস্থাটি দিন বর্ধমান শহরের বিভিন্ন প্রান্তে স্ব প্রতিষ্ঠিত মহিলাদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। সমস্ত কিছু প্রতিবন্ধকতা ও চোখ রাঙানিকে অপেক্ষা করে নারী জাগরণের দামামা বাজিয়েছেন বর্ধমানের টোটো চালিকাদের অন্যতমা শ্রীমতি সবিতা দাস। শ্রীমতি সবিতা দাস সহ শহরের অন্যান্য মহিলা টোটো চালিকাদের এই সংস্থাটি তাদের বিশেষভাবে সম্মাননা জানায়। উত্তরীয় ও স্মারক তুলে দেওয়া হয়। তাদের এই কাজের প্রতি সংস্থাটি স্বীকৃতি জানানোয় তারা ভীষণ খুশি হন। এরপর তাদের সারা মাসের মুদিখানার বাজার এবং কিছু আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। বর্ধমান শহরের প্রথম টোটো চালিকা শ্রীমতি সবিতা দাস বলেন, আট বছর ধরে তিনি টোটো চালাচ্ছেন মূলত তার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্যই উনি এই পেশায় এসেছেন টোটো চালিকা সান্তনা দাস ও সন্তোষ প্রকাশ করেন। একইভাবে আজ সম্বর্ধনা দেয়া হয় সবজি বিক্রেতা কিছু মহিলাদের। ৭০ঊর্ধ্ব বিধবা সুজাতারাই বলেন, ৩২ বছর ধরে সবজি বিক্রি করে তিনি সংসার প্রতিপালন করে চলেছে। এত দিনে সেই লড়াইয়ের তিনি আজ স্বীকৃতি পেলেন। সংবর্ধনা দেওয়া হয় অজুনা ভাইরাল হওয়া মুনমুন দিদিকে যিনি মূলত তার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে করানোর সময় থেকে সংসারে হাল ধরতে রাস্তার উপরেই খুলে ফেলেছেন মুসুরের রান্না ঘর। এই সংবর্ধনা পেয়ে আপ্লুত হয়ে তিনি জানান, এই উপহার লড়াইয়ের বাড়তি রসদ যোগাবে। সংবর্ধনা দেয়া হয় সুনিতা দিদিকে যিনি নিজের মেয়েকে মানুষ করে তোলার জন্য রাস্তায় দই বড়া বিক্রি করে চলেছেন। তার ১১ বছরের মেয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠুক এটাই তার কামনা। মল্লিক পুকুর বস্তি এলাকায় যে সমস্ত বয়স্ক মহিলারা সংসার সামলাতে বা অসুস্থ স্বামীর সেবা করা ও চিকিৎসার খরচ জোগাড় করার জন্য এখনো বাসি কাজ করে চলেছেন তাদেরকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়। আত্মরক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ই তাদের এই সংস্থাটি তরফ থেকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ষাট ঊর্ধ্ব কৃষ্ণা পোদ্দার বলেন, তার স্বামী রিকশা চালাতে কিন্তু তিন বছর ধরে মারন রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই সংসারের হাল ধরতে তিনি লোকের বাড়ি কাজ করেন। সোসাইটিটিকে ওনার জীবন সংগ্রামের পথে পাশে পেয়ে কৃষ্ণা দেবী আপ্লুত। পিয়া পাসওয়ার্ড ছ মাস হল স্বামীকে হারিয়েছেন। দেড় বছরের একমাত্র সন্তানকে বড় করার জন্য তিনি রাস্তার ধারে ঘুগনি বিক্রি করছেন। তার লড়াই কুর্নিশ জানিয়ে এই সংস্থাটি তার মনোবল আরো বাড়িয়ে দিল বলে তিনি তার মত ব্যক্ত করেন। সোসাইটির সম্পাদক প্রলয় মজুমদার জানান, এভাবে প্রতিটি লড়াকু মহিলার মনোবল বাড়াতে শহর জুড়ে এমন ৫০ জন মহিলাকে এদিন সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই সোসাইটির তরফে এদিন অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চৈতালি ঘোষ, মনীষা মন্ডল, ইতি পোড়েল, জয়ী সাহা, দুতি কোনার, শিল্পা অধিকারীরা জানান, ঐতিহ্যপূর্ণ নারী দিবসে আমরাই পারি এই বার্তা সমাজের কাছে পৌঁছে দিতে তাই আজকের এই মহতী উদ্যোগের প্রতি স্যালুট জানায়।